আধুনিকায়নে একধাপ এগিয়ে শ্রীমঙ্গল থানা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ৮:০৪ অপরাহ্ণ
তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে:
পর্যটন নগরী চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের শ্রী বর্ধিত করতে দৃষ্টি নন্দন করে সাজানো হয়েছে শ্রীমঙ্গল থানা ক্যাম্পাসকে। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে দেশের এই প্রথম একটি থানা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সাজানো হয়েছে । শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শ্রীমঙ্গল থানার অমসৃন ভবন ও ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ ক্যাম্পাসকে আধুনিক রুপে রুপায়িত করেন শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুুবুর রহমান। পাশাপাশি এলাকার আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে থানাটি। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে শ্রীমঙ্গলে নিরাপদে দেশি বিদেশী পর্যটকরা ভ্রমন করছেন।
শত বছরের প্রাচীন শ্রীমঙ্গল থানাটি দীর্ঘদিন ধরেই অনেকটাই অগুছালো ও অমৃসন অবস্থায় ছিলো। শ্রীমঙ্গল থানায় যোগদান করে অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান প্রথমেই আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। একই সাথে পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে এলাকাবাসীর সহায়তায় তিনি শ্রীমঙ্গল থানা ক্যাম্পাসকে আধুনিক রুপে রুপায়িত করেন। বিশেষ করে থানার নিরাপত্তা প্রহরী পোস্ট সম্বলিত আধুনিক গেইট স্থাপন করেন। এ রকম গেইট এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আর কোন থানায় দেখা যায় নি। গেইটটি দেখা মাত্রই শ্রীমঙ্গল থানা তথা থানা পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে পজেটিভ ধারণা জন্মে। গেইটের ভিতর দিয়ে থানার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা মাত্রই চোখে পড়বে সুউচ্চ আধুনিক একটি পানির ফোয়ারা পাশেই চমৎকার একটি ফুলের বাগান। আর থানার প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করা মাত্রই চোখে পড়বে পাল্টে যাওয়ার দৃশ্য। ভবনের প্রবেশদার পেসিস, বারান্দা ও আশপাশ মসৃন টাইলস দ্বারা মোড়ানো হয়েছে। যা মানুষের ভিতর উৎফুল্লতা ও প্রফুল্লতার ভাব জন্মায়।
এখনেই শেষ নয় প্রশাসনিক ভবনের মধ্যবর্তী স্থানে যেখানে ইতিপূর্বে ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ ছিল সেখানেও শুভিত হচ্ছে সুগন্ধি ফুলের বাগান এবং দৃষ্টি নন্দন আলোকসজ্জা। যা শ্রীমঙ্গলের সুশিল সমাজকে মুগ্ধ করে। এছাড়াও থানায় আসা আগন্তকদের বসার জন্য তৈরী করা হয়েছে বিশ্রামাগার, যা আগন্তকদের প্রশান্তি যোগায় এবং পুলিশ যে একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্টান তার প্রমান মিলে। এছাড়াও অসংখ্যক বিদেশী পর্যটক শ্রীমঙ্গল থানা ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর পরিছন্ন একটি কম্পাউন্ড দেখে আনন্দিত হন এবং তারা বাংলাদেশ পুলিশ সম্পর্কে একটি সুন্দর ধারণা নিয়ে যান।
২০১৫ সালের জুলাই মাসে থানায় যোগদানের পর শ্রীমঙ্গল থানার নিরীহ জনগনের জন্য আইন সহায়তাসহ ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন কর্তৃক সম্মাননায় ভুষিত হন। এছাড়াও শ্রীমঙ্গল থানার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ভুমিকা রাখায় একাধিক বার মৌলভীবাজার জেলা তথা সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ট অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত হন। তাছাড়াও মাদক নির্মুল, চুর ডাকাত গ্রেফতার, সাজা পরোয়ানা, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলে অসাধারন অবদান রাখায় এবং গুরুত্বপূর্ন মামলার রহস্য উদঘাটনে সফল হওয়ায় গত বছর সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ট অফিসার হিসেবে আইজিপি পুরস্কার পান শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুুবুর রহমান।
শ্রীমঙ্গলের জানজট নিরসনে ও ছিনতাই রোধকল্পে এবং মটর সাইকেল যোগে অপরাধ সংগঠিত যাতে না হয় তার লক্ষে রেজিট্রেশন বিহীন মটর সাইকেল এর উপর জোর অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা সরকারের রাজস্ব আয় হয় এবং এতে করে মটর সাইকেল যোগেও সংগঠিত অপরাধ ও কমে যায়।
তার ও তার নির্দেশে শ্রীমঙ্গল থানার অনান্য উপ-পরিদর্শকদের কঠোর হস্তক্ষেপে মাদক ব্যবসা, পতিতা ব্যবসা, শহরের জানজট অনেকটা সহনীয় পর্যয়ে চলে আসে।
তার এই তৎপরতার জন্য ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক নিরব চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলসুতিতে ব্যবসায়ীরা স্বাছন্দে ব্যবসা করতে সক্ষম হচ্ছেন। একই সাথে তার হস্তক্ষেপে দেশের কঠোর সময়ে ন্যুন্নতম ঘটনা ছাড়াই দুটি দূর্গা পূজা অনুষ্টিত হয়েছে। সুলাকিয়া ঈদ গায়ে হামলার পর সারাদেশে অস্তিশীল পরিস্থিতিতে শ্রীমঙ্গলে পবিত্র ঈদুল আযহা শান্তিপুর্ন ভাবে পালিত হয়েছে। তার বিশেষ অভিযানে শ্রীমঙ্গল শহরে অবৈধ ভাবে চলাচলকারী বেটারি চালিত অটোরিকশা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ এবং জনগনের দুরত্ব কমানোর জন্য এবং ভুক্তভুগীরা যাতে দালাল কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত না হন তার লক্ষ্যে এবং আইন শৃঙ্খলা সুরক্ষার লক্ষ্যে শ্রীমঙ্গল থানা এলাকার ৯ টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রায় ২ শতাধিক কমিউনিটি পুলিশিং সভা ও উঠান বৈঠক করেন। এর ফলে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বেশ পজেটিভ ধারণা আসে। যার ফলে অনেকেই তাদের সমস্যা নিয়ে সরাসরি থানায় এসে অফিসার ইনচার্জ এর দারস্ত হন। এতে অনেকে প্রতিকারও পান।
এই সমস্থ পজেটিভ কাজ করার জন্য কতিপয় স্বার্থান্বেশী মহল যারা পুলিশের নামে ভুক্তভূগীদের নিকট হতে মোটা অংকের টাকা আদায়, মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চাঁদা সংগ্রহ, অবৈধ্য অটোরিক্সা থেকে চাঁদা আদায়, ফুতপাত থেকে মাসোয়ারা আদায় এবং বেআইনি তদবির অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।
এছাড়াও তার সময়ে শ্রীমঙ্গলে উল্ল্যেখযোগ্য আরো ২টি উন্নয়ন সাধিত হয়। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল মাছ বাজার, কাঁচা বাজার, চাল বাজার ও ষ্টেশন রোডের রাস্তার দু পাশের সহ¯্রাধিক দোকান উচ্ছেদ করে শ্রীমঙ্গল শহরকে পরিচ্ছন শহরে রুপান্তরিত করেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল সদর ইউপি চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় জানান, অতিতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমানের সময়ে শ্রীমঙ্গল থানার আইন শৃঙ্খলাবস্থা ভালো ছিলো। তবে ২/৩ মাস আগে কয়েকটি চুরি ডাকাতি মানুষকে কিছুটা উদ্বেগে ফেললেও বর্তমানে তা শতভার নিয়ন্ত্রিত রয়েছে।
এ ব্যাপারে অপর জন প্রতিনিধি আব্দুস সালাম রাজা জানান, এই সময়ে স্থানীয় বিভিন্ন বিষয়ে মামলার চেয়ে আপোস মিমাংসা হয়েছে অনেক বেশি।
তবে সম্প্রতি তার বদলীর খবরে শ্রীমঙ্গলের মানুষ অনেকটা উদ্বেগে আছেন, ওসি মাহাবুবের এ কর্মযজ্ঞের স্থায়িত্ব থাকবে তো ?