নিখোঁজ ৬ বাংলাদেশীর অবশেষে মুক্তি : লিবিয়ায় অপহরণ, বাংলাদেশে মুক্তিপণ
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ নভেম্বর ২০১৬, ১১:৫৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
লিবিয়ায় নিখোঁজ ৬ বাংলাদেশী শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার ৫ দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে অবশেষে মুক্তি পেয়েছে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে। অন্যদিকে মুক্তিপণের মোটা অংকের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে ধানি জমি ছাড়াও সহায়-সম্বল বিক্রি করতে হয়েছে অপহৃতের পরিবারের সদস্যদের। এদিকে মুক্তি পাওয়ার পর আবার অপহরণের ভয়ে প্রবাসে চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ঐ ৬ বাংলাদেশী। এর আগে গত বুধবার লিবিয়ার জোয়ারা থেকে ত্রিপলী যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হয় তারা। অপহরণের পর মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশীরা জানায়- ঘটনার দিন সকালে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলীতে বাংলাদেশ দূতাবাসে যাওয়ার পথে গারিয়ান ও আজিজিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে রাস্তার এক চেকপোষ্টে তল্লাশীর নামে তাদের ধরে নিয়ে যায় পুলিশের পোশাক পড়া কয়েকজন সশস্ত্র যুবক। প্রথমে তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে পাশের এক রুমে আটকে রাখে। পরে পাশের একটি নির্জন এলাকায় তাদের নিয়ে গেলে সেখানে অপহরকারী দলের দুই বাংলাদেশী সদস্য ঐ ৬ বাংলাদেশীকে আরেকটি ঘরে আটকে রাখে।
অপহরণকারী দলের ঐ দু’জন বাংলাদেশী সদস্যের একজন শরিয়তপুরের নড়িয়া থানার ড্রমমোরা ইউনিয়নের নন্দগ্রামের সুজন ওরফে কালা ইমরান, আরেকজন মাসুদ ওরফে মাসুম। তারা ঐ ৬ বাংলাদেশীর কাছে থেকে প্রথমে মোবাইলসহ কয়েক’শ দিনার নিয়ে নেয়। একদিন আটকে রাখার পর ৬ শ্রমিকের মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতন চালাতে থাকে ঐ ২ বাংলাদেশী অপহরণকারী। অমানষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা দেশে পরিবারের নম্বর দিতে বাধ্য হয়। ৬ জনের পরিবারের সদস্যদের নম্বর নেয়ার পরে জামাল, মাসুদ ও ইমরান নামে লিবিয়ার ০৯১০২৩৯৮৩৭ ও ০৯১০৮৩২৪০৩ ফোন নম্বর থেকে ফোন করে প্রত্যেক পরিবারের কাছে ১ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে এবং শেষ পর্যন্ত ৩ দিনের মধ্যে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ না দিলে, ঐ ৬ জনকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।
এরপর বাংলাদেশ থেকে নাম না জানিয়ে ০১৭৭৮৯২৩৪৯৪ মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে টাকা দিতে বলে। এ ঘটনার পর দিশেহারা হয়ে পড়ে ঐ ৬ শ্রমিকের পরিবার। তারা কেউ সুদের উপর, কেউবা ধানি জমি পানির দামে বিক্রি করে টাকা যোগাড় করতে থাকে। পরে পরিবারগুলোর কাছে একে একে ০১৫৫১২৪৪৬১৯, ০১৭২৮৬৭১৮৩৫, ০১৬৩০৪৫৫৬৬৮, ০১৮১৭৩০০০৫১, ০১৭৭৮৯২৩৪৯৪, ও ০১৯৪৬৭৭৭১৮৯, ০১৯৪৬৭৭৭১৯০, ০১৭৩২৮৪৬৩৮০ এই বিকাশ নম্বরগুলোতে ২ লাখ ৮০ হাজার এবং ০১৭৭৮৯২৮৪৯৪ এই নম্বরে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলা হয়। অপহৃতের পরিবারগুলো ঐ নম্বরগুলোতে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা বিকাশ করলে, একদিন পর লিবিয়া থেকে ছেড়ে দেয়া হয় ৬ বাংলাদেশীকে।
সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশী শ্রমিক জসিম উদ্দিন, আবুল হাসেম, খোকন মিয়া, শাহাবুল হোসেন, রফিক মিয়া ও নুরুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, তাদের ছেড়ে দেয়ার আগে বাংলাদেশী অপহরণকারীরা হুমকি দিয়ে বলেছে- বিষয়টি জানাজানি হলে আবারও ধরে নিয়ে তাদের প্রাণে মেরে ফেলা হবে। এমনই হুমকিতে এখনো চরম আতঙ্কে আছে ঐ ৬ বাংলাদেশী। এদিকে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব ফেসবুক পেজে গারিয়ান এলাকা থেকে সুজন নামের এক অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে বলে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তাদের অপহরণকারী ঐ সুজন নয় বলেও জানিয়েছে তারা।
এর আগে গত ১৬ নভেম্বর ঐ ৬ বাংলাদেশী শ্রমিকের নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রকাশ করে সুরমা নিউজ।