মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত আলী’র মানবেতর জীবনযাপন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ নভেম্বর ২০১৬, ১১:০৪ অপরাহ্ণ
তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, মৌলভীবাজার থেকে:
“দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধে। তখন নিজের জীবনের কথা ভাবিনি। শুধু ভেবেছি এ দেশকে স্বাধীন করতেই হবে। যুদ্ধে চোখের সামনে আমার সহযোদ্ধা অনেকের মৃত্যু দেখেছি। আল্লার দয়ায় আমি বেঁচে আছি। কিন্তু স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেড়িয়ে গেলেও আমি আজও পাাচ্ছি না মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, পাচ্ছি না কোন সুযোগ-সুবিধা। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছি” অশ্রুশিক্ত নয়নে কথা গুলো বলছিলেন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত আলী।
১৯৭১ সালের দেশকে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করতে তিনি যোগ দিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। মৃত ফরিদ উদ্দিন ও মৃত ফাতেমা খাতুন এর সন্তান মো. শওকত আলী ভোলা গঞ্জের উৎমা, মেঘালয়, ভারতের ডপকি বাজার, শিলং ইত্যাদি ক্যাম্পে প্রশিক্ষন নিয়ে বাংলাবাজার, সিন্ধুরখান, নরসিনদী, বালিউড়া , রাজারগাও, হাদারটিলা, দূর্বীন টিলা নামক স্থান গুলোতে যুদ্ধ করেন। এ সময় তাঁর কমান্ডার ছিলেন হেলাল ক্যাপ্টেন এবং বীর প্রতিক অধ্যক্ষ মো. ইদ্রিস আলী।
যুদ্ধ শেষে মো. শওকত আলী তার কর্মস্থল রেলওয়ের মিস্ত্রি হিসেবে যোগ দেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল প্রকার কাগজপত্র থাকা সত্তেও তিনি এখনও পাচ্ছেন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবরের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের গেজেটে সওকত আলীর নাম অন্তভূক্ত হয় , যার গেজেট নং ১৯১৬।
মো. সওকত আলী তিনি দূঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করলাম । সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু আমি পাচ্ছি না কিছুই। আমি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনে ভোট দেই। অনেকে আমার সকল কাগজ পত্র বৈধ। আমি এই ভাতা পাবার জন্য অনেকের কাছে গিয়েছি। সকলে হবে হচ্ছে বলে দিন পার করছেন। অনেক কষ্ট করে মেয়েদের বিবাহ দিয়েছি। এখন দিন আনি দিন খাই। কোন রকমে দিন যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কাজ করছেন উনার প্রতি আকুল আবেদন আমাকে মুক্তিযোদ্ধা সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হোক।
মুক্তিযোদ্ধা মো. সওকত আলী’র বিষয়ে উনার তৎকালিন ক্যাপ্টেন অধ্যক্ষ মো. ইদ্রিস আলী(বীর প্রতিক) জানান, মো. শওকত আলী স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা, তিনি আমার সহযোদ্ধা এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছাতক রেলওয়ে স্টেশন থেকে সরাসরি ভারতে গিয়ে মেঘালয় ৩নং ব্যাচে ২৮ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে ৫ নং সেক্টরের চেলা (বাশতলা) সাবসেক্টরে প্রথম ইদ্রিস কোম্পানী এবং পরে ডেলটা কোম্পানীর যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এখন উনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সহ কিছুই পাচ্ছেন না বিষয়টি আমাদের অনেক কষ্ট দেয়। সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি মো. সওকত আলীর মত প্রকৃত যোদ্ধাদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার।
দেশকে স্বাধীনতা করতে যারা নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এনে দিয়েছিল একটি লাল সবুজের পতাকা । যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি তাদেরকে ঋন কখনোই শোধ হবে না। দেশের এই সুর্য্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের যাতে মানবেতর জীবন কাটাতে না হয় সে বিষয়ে সবার লক্ষ রাখা উচিৎ।