চাঞ্চল্যকর দুই শিশু খুনের নেপথ্য কারণ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১২:৫৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
ওসমানীনগরের চিন্তামনি গ্রামে চাঞ্চল্যকর দুই শিশু খুনের নেপথ্যে রয়েছে পারিবারিক কলহ। এর জের ধরেই মানসিক ভারসাম্যহীন পিতা ছাতির মিয়া নির্মমভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করে দুই শিশু সন্তানকে।
স্ত্রী নুরমনিকে সন্দেহের চোখে দেখতেন ছাতির মিয়া। এ নিয়ে তাদের পারিবারিক বিরোধ ছিল তুঙ্গে। গেলো কয়েক বছর ধরে এই বিরোধের জের ধরে এক মাস পিত্রালয়ে ছিলেন ছাতির মিয়ার স্ত্রী। অভিযোগ ছিল- ছাতির মিয়া সব সময় স্ত্রীকে মারধর করে। এ কারণে স্ত্রীও তার কাছে আসতে চাচ্ছিল না। এলাকার লোকজন মধ্যস্থতা করে অবশেষে তাকে স্বামীর বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু স্ত্রীর উপর ক্ষোভ কমেনি ছাতির মিয়ার। একটু চুন থেকে পান খসলেই লেগে যায় ঝগড়া। সংসার করলেও মনোমানিল্য চলছিলই। আর স্ত্রীর উপর রাগ করেই ফুটফুটে দুটি পুত্র সন্তানকে নির্মমভাবে খুন করল ছাতির মিয়া। খুনের ঘটনার পরপরই ছাতির মিয়া পালিয়ে যায়। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার চিন্তামনি দরগাবন্দ এলাকা থেকে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয় জনতা। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজ হাতে সুপারি শলা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সন্তান রুজেল ও মামুনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে পিতা ছাতির।
দুটি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে শোকের অন্ত নেই সিলেটের ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে। চিন্তামনি গ্রামটি দুটি উপজেলায় বিশেষভাবে পরিচিত। ওই গ্রামে নির্মম এ ঘটনায় দুটি উপজেলা জুড়েই ধিক্কার চলছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছাতির মিয়া সোমবার দুপুরের পর ১১ বছরের পুত্র সন্তান রুজেল মিয়া ও ৮ বছরের পুত্র সন্তান মামুন মিয়াকে নিয়ে গ্রামের পাশের হাওরে মাছ ধরতে যান। পিতার সঙ্গে দুটি সন্তান অনেকটা উৎসাহ ভরে মাছ ধরতে গিয়েছিল। কে জানতো মায়ের কাছ থেকে বিদায় হয়ে যাওয়া দুটি সন্তানের শেষ যাওয়া। ছাতির মিয়ার বড় পুত্র রুজেল মিয়া স্থানীয় চিন্তামনি গ্রামের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ও মামুন মিয়া প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, বিকালের দিকে হাওর থেকে মাছ নিয়ে বাড়ি এসেছিল রুজেল মিয়া। মাছ রেখে পুনরায় হাওরে চলে গেছে। যাওয়ার সময় মাকে বলেছে- সে পিতার সঙ্গে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেলেও তারা ফিরে না আসায় বাড়ির লোকজন তাদের খুঁজতে থাকে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত ৮টার দিকে হাওরের একটি ডোবায় তারা রুজেল ও মামুনের লাশ দেখতে পান। গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, দুটি সন্তানের মধ্যে মামুনের লাশ পানিতে ডুবেছিল। তবে তার মুখ ভেসেছিল। আর রুজেলের লাশ ছিল অর্ধেক পানিতে। স্থানীয়রা প্রথমে লাশ দেখার পর চিৎকার শুরু করেন। ছুটে যান ছাতির মিয়ার পরিবারের সদস্যরাও। তারা গিয়ে দুটি শিশুর লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে পুলিশ গিয়ে রাত ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এদিকে, পিতা ছাতির মিয়ার হাতে নৃশংসভাবে দুই সহোদর রুজেল ও মামুন খুনের ঘটনায় শোকের মাতম চলছে নিহতদের পরিবারে। এ ঘটনায় চিন্তামনি গ্রামসহ গোটা উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্তব্ধ হয়ে পড়েছে চিন্তামনি গ্রাম। বুকের মানিক দুই ছেলে সন্তানকে হারিয়ে একমাত্র কন্যা সন্তান তানজিনাকে বুকে নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নিহত রুজেল ও মামুনের মা নুরমিন বেগম। ছেলেদের শোকে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী রয়েছেন তিনি। এক সঙ্গে একই পরিবারের দুই সহোদর আবার পিতার হাতে খুন হওয়ায় ঘটনাস্থল উপজেলার দয়ামীর ইউপির চিন্তামনি গ্রামসহ গোটা উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার রাত থেকে গতকাল সারা দিন পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ গণমাধ্যমের কর্মীরা নিহতদের গ্রামের বাড়ি চিন্তামনিতে ভড়ি করেছেন। গতকাল দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে নিহত রুজেল ও মামুনের লাশ তাদের পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করেছে পুলিশ। গতকাল আছরের নামাজের পর জানাজার নামাজ শেষে নিহতের চিন্তামনি গ্রামের পারিবারিক কবরে তাদের লাশ দাফন করা হয়। নিহত শিশু দুটির সুরতহাল করার সময় তাদের গায়ে চোখে ও মাথার একাধিক স্থানে শলার আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ওসমানীনগর থানার ওসি আবদুল আউয়াল চৌধুরী।