অযত্ন-অবহেলায় ৭ বছরেও চালু হয়নি ‘ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ অক্টোবর ২০১৬, ৬:৪৪ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
দীর্ঘ ৭ বছরেও চালু হয়নি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর পৈতৃক নিবাস ওসমানীনগরের দয়ামীরে নির্মিত ‘ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’।
অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে দৃষ্টি নন্দিত ভবন এবং ভেতরে থাকা দামি আসবাবপত্র। জাতির বীর সন্তানের স্মৃতির প্রতি এতো অযত্ন-অবহেলাকে ওসমানীর প্রতি অসম্মানের সামিল বলে মনে করছেন এলাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহল। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেটি দ্রুত চালু করার দাবি এলাকাবাসীর।
জানা যায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে সিলেট জেলা পরিষদ কর্তৃক ওসমানীনগরের দয়ামীরে ৩৫৩৫ বর্গফুট জায়গায় ৮১.৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ওসমানী গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ এর ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০০৮ সালের ২২ ডিসেম্বর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান মইন উ আহমেদ।
২০০৯ সালে ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে দামি আসবাবপত্র ক্রয় করে ভবন কক্ষে সজ্জিত করে রাখা হয়। এরপর ওসমানীর ম্যুড়াল ও জীবনী স্থাপনের অজুহাতে দীর্ঘদিন অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে প্রতিষ্ঠানটি চালুর কোন উদ্যোগ না নিয়ে ২০১২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং স্থানীয় সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরীকে দিয়ে লোক দেখানো উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পরও সেটি পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দয়ামীরস্থ ওসমানীর পৈতৃক বাড়ির নিকটবর্তী সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন দৃষ্টি নন্দিত স্থাপনার লোহার তৈরি সীমানা প্রাচীর ঢেকে রেখেছে লতা-পাতা ও আগাছা। ভবনের সামনের বিশাল মাঠ জুড়ে সুন্দর ফুলের বাগান ও বসার চেয়ার থাকলেও ঘাস, লতা-পাতা ও আগাছা সেই সৌন্দর্যকে মলিন করে দিয়েছে। ভবনের দেয়াল বেয়ে লতা-পাতা জানালা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছে। বারান্দায় জন্ম নিয়েছে আগাছা। ভেতরে থাকা আসবাবপত্রে জমে আছে ধুলোবালির স্তর। ভবনে বাহির-ভিতরের সর্বত্র দুদোল্যমান মাকড়সার জাল। পাখিও বাসা বেঁধেছে কক্ষের ভেতর।
বই রাখার সেলফগুলোতে বইয়ের পরিবর্তে রয়েছে অসংখ্য মাকড়সা ও তার জাল। ভবনের দেয়ালের রং খসে পড়ছে এবং বাহিরের দিকের বিভিন্ন স্থানে শেওলা ধরেছে। দেয়াল খোদাই করে বের করা রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইন। সব কিছু মিলিয়ে জরাজীর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে সেখানে। অযত্ন আর অবহেলার কারণে সুন্দর স্থাপনাটির লাবণ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি চালু ও রক্ষণাবেক্ষণে আজও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদ সিলেট এর সভাপতি সায়্যীদ আহমদ বহলুল বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক সিলেট জেলা পরিষদ। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার পরও দীর্ঘদিন যাবত এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। ভবনটি অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে। এটি চালুর জন্য আমরা জেলা পরিষদে লিখিত অনুরোধ জানিয়েও কোন সুফল পাইনি।
সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আপ্তাব আহমদ বলেন, এই মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতি রক্ষায় এমন অবহেলা তাহার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের সামিল। দ্রুত এর কার্যক্রম চালুর দাবি জানান তিনি।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত আলী বলেন, প্রতিষ্ঠানটি অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি।
সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল আহাদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।