ঈদ যাত্রায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল, ২৬৫ জনের প্রাণহানি
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১:০৫ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
গত ৭ থেকে ১৮ই সেপ্টেম্বর। মাত্র ১২ দিন। ঈদযাত্রার এ ক’টা দিনে সড়কে মৃত্যুর মিছিল ছাপিয়ে গেছে অন্য যে কোনো সময়কে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাড়ি যাওয়ার এই আধমাসের কম সময়ে ঘটেছে ২১০টি সড়ক, রেল ও নৌ-দুর্ঘটনা। এতে প্রাণহানি হয়েছে ২৬৫ জনের। আহত হয়েছেন আরো ১১৫৩ যাত্রী। এদের মধ্যে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। শুধু তাদের নিজেদের নয়। পরিবার ও স্বজনদের ঈদ আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হয়েছে শোক এবং বেদনায়। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গতকাল। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণে উঠে আসা তথ্য জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি জানায়, প্রতিবছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। গত তিন বছর ধরে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আসছে সংগঠনটি। বিগত ঈদুল ফিতরে দীর্ঘ ছুটি থাকায় ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক হলেও এবারের ঈদে মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তির পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বলে দাবি করে যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত সংগঠনটি।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৭ই সেপ্টেম্বর থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ১৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিগত ১২ দিনে ১৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৮ জন নিহত ও ১০৫৬ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে ৮টি নৌ দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় রেলে কাটা পড়ে ৭ জন নিহত, চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ৫০ জন আহত হন, চট্টগ্রামে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে আহত হয়েছেন ১৭ জন।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ৭ই সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঈদযাত্রায় ১৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা, ৮টি নৌ দুর্ঘটনা, ৭টি রেলে কাটা ও ৩টি রেল দুর্ঘটনায় সংঘটিত হয়। এসব দুর্ঘটনায় বিপুল সংখ্যক যাত্রী হতাহত হন। ঈদযাত্রা শুরুর প্রথম দিন ৭ই সেপ্টেম্বর ১৬টি দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছে। দ্বিতীয় দিন ৮ই সেপ্টেম্বর ১২টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৩৪ জন আহত হন। ৯ই সেপ্টেম্বর ১৪ দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও ১৮৫ যাত্রী আহত হয়েছেন। ১০ই সেপ্টেম্বর ১৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ২৮ জন নিহত হন। আর ৫৪ জন আহত হন। ১১ই সেপ্টেম্বর ২০টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ১৮২ জন আহত হন এবং ১২ সেপ্টেম্বর ১৩টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ৫৪ জন আহত হয়েছেন। ১৩ই সেপ্টেম্বর ১০টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন। অষ্টম দিন ১৪ই সেপ্টেম্বর ২৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ২৯ জন নিহত হন। আহত হন ১৬২ যাত্রী। ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৩টি দুর্ঘটনায় একই সংখ্যক যাত্রী নিহত ও ৮৫ জন আহত হয় এবং পরদিন ২৩ দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ১৮৩ জন আহত হয়েছেন। একাদশতম দিন ১৭ই সেপ্টেম্বর ২৯টি দুর্ঘটনায় ৩৭ যাত্রী নিহত ও ১০২ যাত্রী আহত এবং দ্বাদশতম দিন ১৮ই সেপ্টেম্বর ১৮ দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ৬৭ যাত্রী আহত হয়েছেন।
এদিকে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলায় ট্রাকের ধাক্কায় হরিনারায়ণপুর ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান, ঝিনাইদহে ট্রেনে কাটা পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিদ্যা নিকেতনের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলাম, ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায় বাইক খাদে পড়ে নিহত হয়েছে নড়াইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই জাহিদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ট্রাকের ধাক্কায় পুলিশ কনস্টেবল আবু মুসা, গোপালগঞ্জ বাস-কারারক্ষী জিপ সংঘর্ষে হাসান নামের এক কারারক্ষী নিহত হয়েছেন। গোপালগঞ্জ কারাগারের জেলার আবু সায়েম, রাজবাড়ী সদরে সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) শাকিল হোসেনসহ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ৫টি গাড়ি ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এতে ২১ পুলিশ সদস্য ও ১০ সেনা সদস্য আহত হয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায় সংগঠিত দুর্ঘটনার ৭২টি মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১২ জন নিহত ও ৫৫৭ জন আহত হয়েছেন। ২৭টি বাস চাপার ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। ২০টি পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ৩৪ জন নিহত ও ২৬৪ জন আহত হয়েছেন। ৮টি ট্রাক চাপার ঘটনায় ৮ জন নিহত ও ৪ জন আহত হন। এছাড়াও নানা কারণে সংগঠিত ৮৩টি দুর্ঘটনায় ৮২ জন নিহত ও ৩০৮ যাত্রী আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি দুর্ঘটনার কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা কাজী মাসুদ আহম্মেদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি রুস্তম আলী খান, এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিক্যালের সভাপতি ও বারডেম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ডা. হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’য়ে যুগ্ম মহাসচিব গণি মিয়া বাবুল, নিরাপদ নৌ-পথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব আমিনুল রসুল বাবুল, যাত্রীকল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্য মো. সামসুদ্দীন চৌধুরী, এম মিলাদ উদ্দিন মুন্না প্রমুখ।