বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বলকারী সিলেটের আনোয়ার চৌধুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ
লন্ডন অফিস : শত বছর যাবত ব্রিটেনে অবস্থান করছেন আমাদের বাঙালিরা । সময়ের বিবর্তনে সাফল্যের সাথে তাদের অবস্থান বহির্বিশ্বে বাঙালিদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে । নানা কর্মে হয়েছেন আলোচিত মুখ । তাদের সাফল্যগাথা কর্মজীবন ব্রিটেনে বাঙালিদের অবস্থানকে করেছে সুসংহত । বহির্বিশ্বে তারাই তুলে ধরছেন বাংলাদেশের পতাকা । ব্রিটেনের সব জায়গাতে তাদের সফল বিচরণ বাঙালিদের করছে বড়ই গর্বিত । সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী ব্রিটেনে বাঙালিদের মুখ উজ্জ্বলকারী আমাদের গর্বিত কয়েকজন মানুষদের একজন ।
আনোয়ার চৌধুরীর জন্ম বাংলাদেশে । ১৯৫৯ সালে সিলেটের জগন্নাথপুর থানার প্রভাকর পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই কুটনৈতিক ব্যক্তি । উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন ইউনিভার্সিটি অফ সালফোর্ড থেকে । কাজ করেন সিমেন্স পলেসি সিভিল সার্ভিস ও পরবর্তিতে যোগ দেন মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্সে । সেখানে ২০০০ সাল পর্যন্ত কাজ করার পর কেবিনেট অফিসে ও কাজ করেন আনোয়ার চৌধুরী । একজন বাংলাদেশী হিসাবে স্বপ্ন দেখতেন কোন সুযোগে একদিন বাংলাদেশে কাজ করার। ২০০৪ সালে তার সেই স্বপ্ন পুরন হয় । ব্রিটিশ সরকার তাকে বাংলাদেশে পাঠায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসাবে। যে দেশে জন্ম সে দেশের হাইকমিশনার হওয়ার ভাগ্য জুটে আনোয়ার চৌধুরীর । সাবেক হাইকমিশনার ডেভিড কার্টারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন আনোয়ার চৌধুরী । পরবর্তীতে তার স্থলাভিষিক্ত হন স্টিফেন ইভান্স । দীর্ঘদিন পর ২০১৪ সালে তাকে ব্রিটিশ সরকার দক্ষিন আমেরিকার দেশ পেরুতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসাবে দায়িত্ব দেয়। আনোয়ার চৌধুরী বাংলাদেশে হাইকমিশনার হিসাবে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরেই শিকার হন এক ভয়াবহ দূর্ঘটনার । ২০০৪ সালের ২১ মে নিজ ভূমি সিলেটে হজরত শাহজালাল (রা:) মাজার জিয়ারতের সময় তার উপর জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা করে । কোন মতে তাতে বেঁচে যান তিনি । নিজ দেশে এমন ঘটনা তাকে বড় আঘাত দেয় । জীবনে ঘটে যাওয়া এতো বড় ঘটনার পর ও কাজ করে গেছেন অত্যান্ত সাহস ও নিষ্ঠার সাথে । দেশের স্বার্থ আদায়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা । তার ভূমিকার জন্যই বহির্বিশ্বে দেশে র ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে । তাকে নিয়ে ব্রিটেনে বসবাসকারী বাঙালিরা বড় গর্ব করে থাকেন ।
তার সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুবই ইতিবাচক । কমিউনিটি নেতা আবুল হোসেন সুরমানিউজ টোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, বাংলাদেশে হাইকমিশনার হিসাবে যোগ দিয়েই আমাদের অনেক আলোকিত করেছেন আনোয়ার চৌধুরী । এছাড়া তার ব্যবহার অত্যন্ত অমায়িক । তার উপর গ্রেনেড হামলার পর তিনি যতটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি আঘাত পেয়েছিলাম আমরা । আশংকা করেছিলাম ব্রিটেন সরকার হয়তো নিয়ে আসতে পারে তাকে । শেষ পর্যন্ত তার কাজ করার ইচ্ছার কাছে ব্রিটেন সরকার আবারো তাকে পুনর্বহাল রাখে । এতে তার ভুমিকা ছিল বেশি ।
সাবেক হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী বলেন, যখন শুনলাম আমি বাংলাদেশে হাইকমিশনার হয়ে যাচ্ছি । তখনকার অনুভুতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা । আমি বাংলাদেশ কে বড় ভালোবাসি কারণ সেখানেই আমার জন্ম । কাজ করার সময় আমি আমার কাজকে খুবই উপভোগ করেছি । সকল সীমাবদ্ধতার মধ্য ও চেষ্টা করেছি দেশের জন্য কিছু ভালো কাজ করার । কিছু কিছু ক্ষেত্রে আঘাত পেয়েছি কিন্তু অনেক বেশি ভালোবাসা পাওয়ায় সেটা ভুলে গেছি খুব সহজেই । ব্যক্তিগত জীবনে আনোয়ার চৌধুরী দুই মেয়ে ও এক পুত্র সন্তানের জনক।
যে কজন মানুষ ব্রিটেনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে বাঙ্গালীদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন তার একজন সিলেটের আনোয়ার চৌধুরী । ব্রিটেনের উচ্চ পর্যায়ে তাদের বিচরণ প্রতিটি বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ গর্ববোধ করে ।