বেশীর ভাগই সিলেটী : বৃটেনে বেড়ে গেছে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের বিয়ে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:৪১ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিস:
জুলাই এবং আগস্ট হচ্ছে বৃটেনের বাঙালি পাড়ায় বিয়ের মৌসুম। সামারের ৬ সপ্তাহের লম্বা স্কুল হলিডের সুযোগে এসব বিয়ের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই সময়ে পুরো ইউকেতে ধুম পড়ে যায় বিয়ে আয়োজনের। বিশেষ করে বাঙালী অধ্যুষিত এলাকায় বিয়ে নিয়ে শুরু হয় তোরজোর। গত বছর ইউকের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে প্রায় ১৫০০ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এসব বিয়ের অধিকাংশই সিলেটী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত। বাংলাদেশী কমিউনিটির এসব বিয়েতে পরিবারগুলো ব্যয় করেছে ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
বৃটেনের জনপ্রিয় এশিয়ানা ওয়েডিং ম্যাগাজিনের একটি অনলাইন সার্ভে রিপোর্টে বলা হয়েছে, বৃটেনে মুসলিমসহ এশিয়ান বিয়েকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২.২ বিলিয়ন পাউন্ডের ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। এশিয়ান কমিউনিটির অধিকাংশ পরিবারেই বিয়ে ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে, এশিয়ানরা বিয়েতে খরচ করেন বছরে তাদের মোট বেতনের দ্বিগুণ অর্থ। এদিক দিয়ে কম যাননি বাংলাদেশী কমিউনিটির সিলেটীরা।
২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারী অনুযায়ী বৃটেনে বাংলাদেশীদের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫২৯ জন। যা বৃটেনের মোট জনসংখ্যার ০.৫%। বৃটেনে বাংলাদেশীরা এখন চতুর্থ প্রজন্মে পদার্পন করেছেন। এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের অধিকাংশেরই বিয়ে-শাদী হচ্ছে এখন বৃটেনে।
অধিকাংশ বাংলাদেশিরাই তাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে আসছেন বাংলাদেশে। কিন্তু গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। ইমিগ্রেশনের কড়াকড়ি, ভুয়া বিয়ে এবং আত্মীয় স্বজনদের হয়রানির কারণে দেশে লন্ডনী বিয়ের আয়োজনে ভাটা পড়েছে। এর মধ্যে হোম অফিস কর্তৃক ইমিগ্রেশন আইনে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক এবং ২০১২ সালের জুলাই থেকে ভিসা আবেদনে ১৮,৬০০ পাউন্ড বেতনের সীমা নির্ধারণ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো বাধাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বর্তমানে প্রায় ৯৮% বিয়েই হচ্ছে এখন ইউকেতে। এই সুবাদে কমিউনিটিতে বিয়েকে কেন্দ্র করে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জমজমাট হয়ে উঠছে। একটি বিয়েকে কেন্দ্র করে প্রায় আনুমানিক ১৫ ধরনের ব্যবসা যুক্ত হয়, এর মধ্যে ক্যাটারিং, কার ভাড়া, কেইক হাউস, মেইক আপ আর্টিস্ট, ফটো ও ভিডিওগ্রাফী, ডিজাইন, স্বর্ণ-গহনা, পোশাকসহ অনুসাঙ্গিক বিষয়াদী রয়েছে।
এলবিডাব্লিউএফ সম্প্রতি ২০০ বাংলাদেশি বিয়ে নিয়ে সার্ভে করেছে। তাদের সার্ভে রিপোর্টে উঠে এসেছে, বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রায় ২১% বিয়েতে গড়ে খরচ করা হয় ৩৫ থেকে ৫০ হাজার পাউন্ড। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয় বিয়ের হল, খাবার, কার ভাড়া, ডেকোরেশন এবং ভিডিওগ্রাফি খাতে। ল-ন বেঙ্গলি ওয়েডিংয়ের সিইও সোহানা আহমেদ ইস্ট ল-ন সম্প্রতি বড়ো পরিসরে ওয়েডিং ফেয়ার আয়োজন করেন। সেখানে অংশ নেয় বিয়ে সংক্রান্ত বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। সোহানা বলেন, অতীতে বাংলাদেশি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বা ডিজাইন হাউসগুলো দেশি নামে ব্রান্ডিং করতো না। এখন কমিউনিটিতে বিয়েশাদী বেড়ে যাওয়ার কারণে দিন দিন দেশি ব্রান্ডিংয়ের গুরুত্ব বাড়ছে।
বৃটেনে বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রায় ১২ হাজার কারি হাউস রয়েছে। সেখানে কর্মরত প্রায় ৮০ হাজার প্রবাসী। ব্রিটিশ বাংলাদেশিরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পেছনে এই শিল্প একটি বড়ো ভূমিকা রেখেছে। এই সুবাদে কমিউনিটিতে অনেক ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহকারী এসব ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হবে সারা বৃটেনে প্রায় হাজার খানেকের কাছাকাছি। কমিউনিটির সবচেয়ে প্রাচীন ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান প্রাইড অব এশিয়ার ডাইরেক্টর ওয়াজিদ হাসান সেলিম বলেছেন- চলতি বছর তারা অসংখ্য বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করার অর্ডার পেয়েছেন। তার মতে, এ বছর সারাদেশে প্রায় ২ হাজার বিয়ের আয়োজন হয়েছে। এমনিভাবে দারুণ ব্যস্ত ইম্প্রেশন ইভেন্টস ভ্যেনু। প্রতিষ্ঠানটির ডাইরেক্টর মাইনুদ্দিন আনছার বললেন- প্রায় দিন সকাল এবং বিকেল দুটি শিফটে চলছে তাদের ভ্যেনুতে বিয়ে অনুষ্ঠান। বিলেতে বাংলাদেশি কমিউনিটি বড়ো হওয়ার কারণে এখন বর-কনের কোনো অভাব হয় না।
এদিকে বেথনালগ্রিনে প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে স্বর্ণের ব্যবসা করে আসছেন খোয়াজ জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ খোয়াজ আলী খান। তিনি বলেন, একটি বাংলাদেশি বিয়েতে গড়ে ২৫ ভরি স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়। যার অধিকাংশই ইন্ডিয়ান কমিউনিটির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনছেন বাংলাদেশিরা।
বৃটেনের এথনিক কমিউনিটির মধ্যে বাংলাদেশিরা এখনও দরিদ্র সীমায় বসবাস করছেন। হাউস অব কমন্স লাইব্রেরির তথ্য অনুযায়ী বাংলাাদেশি তরুনদের ৮ দশমিক ৪ ভাগ এখনো চাকুরিহীন। এর পরও এসব তরুণ তরুণীরা তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানকে ব্যয়বহুল করে তোলেন। বিশেষ করে নি¤œ মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বিয়ের বাজেটের উপর প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।