সিলেটে মৃত্যুপথযাত্রী নবজাতককে নিয়ে চিকিৎসা-বাণিজ্য!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০১৬, ১২:৩৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
‘গাব্বার ইজ ব্যাক’ হিন্দি সিনেমায় নায়ক অক্ষয় একজন মৃত মানুষকে ভর্তি করে হাসপাতালে চিকিৎসার নামে অমানবিক বাণিজ্য উন্মোচন করেছিলেন। এ সিনেমার মতো না-হলেও অনেকটা মিলে যায় সিলেটে ছয় ঘণ্টা বয়সী এক নবজাতকের ৩৭ ঘণ্টা চিকিৎসা ও পরবর্তীতে লাশ আটকে রেখে চিকিৎসার ব্যয় পরিশোধ করার ঘটনা।
সুনামগঞ্জ শহরের আলীপাড়ার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন চৌধুরী ও শেফালী বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান ছিল ওই নবজাতক (কন্যা)। সুনামগঞ্জ শহরের একটি ক্লিনিকে সোমবার (২২ আগস্ট) রাতে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া নবজাতকের মাথার একদিক বাঁকানো ও বড় ছিল। জন্মগত এ ত্রুটির চিকিৎসার জন্য ক্লিনিক থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য পাঠানো হয়।
নবজাতকের পরিবারের সদস্যরা জানান- মঙ্গলবার ভোর ৬টার সময় তারা অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিলেট পৌঁছেন। এসময় সরকারি হাসপাতালে কাউকে পাওয়া যাবে কি-না এ নিয়ে সংশয় ছিল তাদের। ওসমানী হাসপাতালে যাওয়ার পথে পড়েছে আল-রাইয়ান হাসপাতাল। সেখানে নবজাতকের চিকিৎসার বিষয়ে পরামর্শ নিতে গেলে দ্রুত তাদের হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলেন। তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় নবজাতককে বাঁচানো সম্ভব বলে আশ্বস্ত করায় তারা সেখানেই ভর্তি করেন।
নবজাতকের পিতা সাব্বির হোসেন চৌধুরী জানান- ভর্তির পর ‘পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে’ জানিয়ে তাদেরকে অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়। সারাদিন অপেক্ষায় থেকে তারা মঙ্গলবার রাতে আবার জানতে চাইলে তখন বলা হয়, ‘আইসিইউতে রাখা হয়েছে, উন্নতি না-হলে পরবর্তী চিকিৎসাও করা যাবে না।’ পরে তারা হাসপাতালের পাশের একটি আবাসিক হোটেলকক্ষ ভাড়া নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। এভাবে ৩৭ ঘণ্টা পাড় হলে পরে তাদেরকে ডেকে এনে হাতে ৪০ হাজার ২০৬ টাকার চিকিৎসা বিল ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়, ‘টাকাটা দিয়ে বাচ্চার লাশ নিয়ে যান’!
সাব্বির বলেন- হাসপাতালের বিলে ৩ জন শিশু-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাচ্চার চিকিৎসা দিয়েছেন উল্লেখ দেখে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কী কী ওষুধ লেগেছে সেগুলো সম্পর্কেও জানতে চাই। এক পর্যায়ে হাসপাতালের ম্যানেজার নবজাতকের লাশ আটকে রাখেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর বুধবার (২৪ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে বিলের পুরো টাকা পরিশোধ করে শেষে লাশ নিয়ে ফিরি।
আল-রাইয়ান হাসপাতাল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সড়কের এক পাশে অবস্থিত। নবজাতকের পরিবারকে দেওয়া হাসপাতালের বিল-ভাউচারে উল্লেখ রয়েছে ‘ভর্তির রেজিস্ট্রেশন ফি’ ৫০০ টাকা। ‘কেবিন’ ভাড়া ৬ হাজার ৪০০ টাকা। ‘মেডিসিন’ ৪ হাজার ৩৯৮ টাকা। ‘অক্সিজেন’ ৫ হাজার ৫৫০ টাকা। ‘মনিটর’ ৩ হাজার ৭০০ টাকা। ‘ডক্টর ভিজিট’ ৩ হাজার ১০০ টাকা। ‘সার্ভিস চার্জ’ ৯ হাজার ২৭৮ টাকা। এছাড়া আরও পাঁচটি খাতের ব্যয় মিলিয়ে মোট ৪০ হাজার ২০৬ টাকা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা ব্যয় বিবরণী দেখে নবজাতকের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান। তবে ভর্তির আগে নবজাতককে সুস্থ্য করে তোলার নিশ্চয়তা ও লাশ আটকে রেখে টাকা আদায়ের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। অস্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি হাসপাতালের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
যোগাযোগ করলে হাসপাতালের চেয়ারম্যান নজরুল হোসাইন বলেন, ‘এখানে সবকিছুই তুলনামূলক কম ধরা হয়েছে।’ এর মধ্যে তার কাছে সুনির্দ্দিষ্ট করে ‘সার্ভিস চার্জের ৯ হাজার ২শত ৭৮ টাকা’ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা বাচ্চার পেছনে আয়া, নার্স, চিকিৎসক থেকে শুরু করে হাসপাতালের সব দপ্তরের লোকবল খাটতে হয়। এটা টোটাল হিসেবে রাখা হয়েছে।’ তাহলে খাতওয়ারি আরও আনুষাঙ্গিক ব্যয় কেন এমন প্রশ্নে তিনি ‘আমরা সবকিছু কম রাখছি, যাচাই করে দেখুন’ বলে এড়িয়ে যান।