জাফলংয়ে ১৩ বছরে মৃত্যু হয়েছে ৪৪ পর্যটকের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০১৬, ১২:৩২ অপরাহ্ণ
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :
অপরূপ প্রাকৃতিক লীলাভূমি সিলেটের জাফলংয়ের অপার সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী ছুটে আসেন। উজান থেকে প্রাকৃতিকভাবে সাজানো পাথরের উপর বহমান স্বচ্ছ জলরাশিতে প্রকৃতিপ্রেমীরা সাঁতার না-কাটলেই জাফলং ভ্রমণ যেন রয়ে যায় অসম্পূর্ণ। তাই শিশু-কিশোরসহ সকলেই ওই স্বচ্ছ হিমশীতল জলে সাঁতার কাটতে নামেন। সাঁতার না-জানার কারণে আনন্দ হয়ে বেদনা। সংঘবদ্ধ পর্যটক দলের সঙ্গীকে প্রাণ দিতে হয় পিয়াইন নদীর চোরাবালিতে। পরিবারের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। জাফলং যেন ওইসব পরিবারে হয়ে দাঁড়ায় রাক্ষুসিনী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ১৩ বছরে সাঁতার না-জানায় প্রায় ৪৪ জন পর্যটক ভ্রমণে এসে লাশ হয়ে ফিরে যান বাড়িতে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংবাদ মিডিয়া জাফলং ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সাঁতার না-জানার সতর্কবাণী প্রচার করলেও জাফলংয়ে সব ভুলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় শিকার হন দেশ-বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ বুধবার (০৩ আগস্ট) বন্ধুদের সাথে ভ্রমণে এসে সিলেটের ব্লুবার্ড স্কুল এন্ড কলেজের নবন শ্রেণির শিক্ষার্থী আশফাক সিদ্দিকী (১৬) সাঁতার কাটতে নেমে লাশ হয়ে ফিরেন বাড়িতে।
আশফাক সিদ্দিকী সিলেট শহরস্থ ঘাসীটুলার মাহবুব সিদ্দিকীর পুত্র। এছাড়া নৌকায় ভ্রমণ করতে বের হয়ে পিয়াইন নদীতে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই।
২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত জাফলংয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন ৪৪ জন। ২০১৫ সালে পিয়াইন নদীতে প্রাণ হারাণ ঢাকার দুই কলেজ ছাত্র আব্দুল্লাহ অন্তর (১৮) ও সোহাগ ঘোষ (১৭)। দু’জনই কবি নজরুল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে জাফলংয়ে পর্যটকের ঢল নেমেছিল। সে সময় ৩ দিনের ব্যবধানে নদীতে গোসল ও নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান ৭ শিশু। সে বছরই ২ আগস্ট মাসে প্রাণ হারান নারায়ণগঞ্জের জসিম উদ্দিন ওসাজেদুল হক।
২০১৩ সালে ৩১ জুলাই পিয়াইন নদীতে নৌকা ডুবে মারা যান মৌলভী বাজারের সাকিল (১০), মামুন (২২), সাদেক হোসেন (২০)। ওই দিন সিলেট নগরীর শাহী ঈদগার হোসানাবাদ এলাকার কামরুল (২০) এবং অজ্ঞাত ১ যুবক। ওই বছরে ১৭ আগস্ট ঢাকার শনির আখড়া এলাকার শুভ আহমদ, ২৫ অক্টোবর ঢাকার যাত্রাবাড়ী কলেজ ছাত্র ইমরান হোসেন এবং ৩০ মে মাদারীপুর সদর উপজেলার চলকিপুর গ্রামের মো. ইব্রাহীমসহ আরো ৪ জন মারা যান।
এছাড়া গত এক দশকে পিয়াইন নদীতে ডুবে মারা গেছেন আরো ২৮ জন। ২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকা জেলার ফাহাদ উদ্দিন, ৩০ আগস্ট মৌলভী বাজারের হিমেল রাজ সঞ্জয়।
২০১০ সালে ২৩ মার্চ ঢাকার খিলগাঁও এলাকার তারেক আহমেদ (২০), রফিকুল ইসলাম ও গৌরাঙ্গ কর্মকার, ২২ মে ঢাকার শাহরীয়ার আহমেদ রাব্বী, ২ জুলাই ঢাকার শাহরিয়ার শফিক, ৩০ জুলাই জামালপুর জেলার মোস্তাকিম তালুকদার, ১২ সেপ্টেম্বর ঝালকাটি জেলার রুহুল আমিন খান রুমিসহ মোট ৭ জন।
২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জের ইউনুছ মিয়া, ৮ মে ঢাকার ফারুক আহমদ, ২১ জুন নরসিংদী জেলার সজিব মিয়াসহ ৩ জন। ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর ঢাকার দিলশাদ আহমেদ, ১৬ ফেব্রুয়ারি গোয়াইনঘাট উপজেলার মুসা মিয়া, ১৬ আগস্ট একই উপজেলার ফখরুল ইসলাম মারা যান। ২০০৪ সালে ২ জন, ২০০৫ সালে ১ জন, ২০০৭ সালে ২ জন।
২০০৩ সালের ১৫ আগস্ট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউর রহমান ফয়সাল ও রাজন আহমেদের মৃত্যু হয়।
পর্যটনপ্রেমীদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ জাফলং ভ্রমণ একান্ত প্রয়োজন। একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনার সাঁতার না-জানা সন্তানদেরকে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণের সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আপনার অল্প ভুলের জন্য সারাজীবন শোকের বন্যায় ভাসতে হবে।