ঝুঁকি নিলেন না সিলেটের ডিসি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০১৬, ৬:২১ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরুঃ
সিলেটের তারাপুর চা বাগানের হাজার কোটি টাকার অবৈধ স্থাপনা সরানোর সময়সীমা শেষ হয়েছে ৩০শে জুলাই। নিয়ম অনুযায়ী পরদিন থেকে সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীনের পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা। কিন্তু ঝুঁকি নিলেন না সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পর্যালোচনা করলেন। আইনি দিক নিয়ে বিশ্লেষণ করলেন। জানালেন বিষয়টি সিলেটের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। করণীয় নির্ধারণের অনুরোধ করেন। এ কারণে ঢাকায় সচিবালয়ে তারাপুর চা বাগান নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক আহ্বান করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন সিলেটের প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতারা। সিলেটের তারাপুর চা বাগানের অর্ধেক সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে সিলেটের ধনকুবের রাগিব আলী গড়ে তুলেছেন নিজ নামে রাগিব-বাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। রয়েছে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট ও দুটি হোস্টেল। পাশাপাশি সিলেট মদন মোহন কলেজের একটি ক্যাম্পাসও তারাপুর চা বাগানে রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে হাজারো ঘরবাড়ি। জমি কিনে ওই বাগানে স্থায়ী আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করে এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলায় আদালত স্থাপনা সরিয়ে নিতে সিলেটের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। এদিকে ৩০শে জুলাই সময়সীমা শেষ হওয়ার পর থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছে এলাকায়। ইতিমধ্যে রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে স্থাপনা না সরানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একই ভাবে আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা একই দাবি জানান। এলাকায় আন্দোলন অব্যাহত থাকায় সিলেটের জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে রোববার বৈঠক করেন তার কার্যালয়ে। বৈঠকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী, সিলেট বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. গৌরমনি সিনহা, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আবদুস সালাম, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান এবং রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. তায়েফ আহমদ, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবদুল জলিল, অধ্যাপক ডা. প্রদ্যোত কুমার ভট্টাচার্য্য, অধ্যাপক ডা. একেএম দাউদ ও অধ্যাপক ডা. এমএ সবুর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের কাছে আরো কিছু সময় চাইলে জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন জানিয়ে দেন আদালতের নির্দেশের বাইরে তিনি কাজ করতে পারবেন না। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গেও। সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন গতকাল জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে আইনি পর্যালোচনা করছে। আদালতের নির্দেশ পালন করতে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। এদিকে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সিলেটের ব্যক্তিগত সহকারী জাভেদ সিরাজ গতকাল জানিয়েছেন, তারাপুর চা বাগান নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অর্থমন্ত্রী সিলেটের প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাদের তার কার্যালয়ে ডেকেছেন। একই সঙ্গে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও রাগিব-রাবিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কলেজের অধ্যক্ষও উপস্থিত থাকবেন। সবাইকে নিয়ে তিনি বিষয়টি পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন বলে জানান। এদিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মদন মোহন কলেজ ক্যাম্পাস, একাধিক স্কুল-মাদরাসা, মসজিদ-মন্দির এবং অসহায় মানুষের বসতবাড়ি রক্ষার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীনের কাছে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আমরা সিলেটবাসীর পক্ষে স্মারকলিপি প্রদানকালে সিটি করপোরেশনের ৬, ৭, ৮নং ওয়ার্ডের পাঁচশতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপিতে এলাকাবাসী মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জনসেবা ও শিক্ষামূলক স্থাপনা, কলেজ হাসপাতাল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বাসাবাড়ি বহাল রাখতে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এলাকার লোকজন উল্লেখ করেন, তারাপুর চা বাগানে গড়ে ওঠা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দেশ বিদেশের ১১শ’ ইন্টার্নি ডাক্তার ও শিক্ষার্থী রয়েছেন। মদন মোহন কলেজ ক্যাম্পাসেও হাজারো শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ করছেন। এসব কলেজ বন্ধ হয়ে গেলে দেশ বিদেশের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর জীবনে নেমে আসবে ঘোর অমানিশা। এছাড়া হাসপাতালকে কেন্দ্র করে এলাকার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। জীবিকা নির্বাহ করছেন হাজারো পরিবার। কলেজ ও হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন এবং দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। স্মারকলিপি প্রদানকালে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন- আবদুর রাজ্জাক খান রাজা, সিটি কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াছ, সাবেক সিটি কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জগদীশ চন্দ্র দাশ, ফজলুর রহমান ফজলু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার করিম সেলিম, আব্দুশ শহিদ চেয়ারম্যান, করিমূল্লাহ হেলাল, শামসুদ্দিন খান, সিথিল দেব, ফখরুল ইসলাম ফারুক, সেলিম আহমদ, সাব্বির খান, নজরুল ইসলাম নজু, মুনায়েম খান ময়নুল, ফখরুল ইসলাম ফারুক, আব্দুর আজিজ মনু, শফিকুর রহমান, ইকবাল হোসেন লস্কর, তুরন আহমদ, এখলাছুর রহমান, আখতারুজ্জামান আখতার, সাজ্জাদ মিয়া, শাহজাহান, নূরুল ইসলাম প্রমুখ। সূত্রঃ মানবজমিন