চোখ আমার ভিজে যায়, সুন্দরবন ধ্বংসের কথায়
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০১৬, ৪:৪৫ অপরাহ্ণ
আমরা বাংলাদেশি। আর বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর মুসলিম দেশের একটি। কিন্তু আমরা মৌলবাদী বা জঙ্গি নই, আবার ভীতুও নই। আমরা যুদ্ধ করে এই বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছি। হাসিমুখে জীবন দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে জানি। আমরা মেধাবী, কর্মঠ, সরল ও সৎ। আমরা ভালোবাসতে জানি, ভালোবাসা আদায় করতেও জানি।
তাই নিজেকে নিয়ে, পরিবারকে নিয়ে, সমাজ নিয়ে, শহর নিয়ে ও গোটা দেশ নিয়ে আমাদের স্বপ্ন আছে । কিন্তু গুটি কয়েক লোক আমাদের স্বপ্ন নিয়ে খেলা করছে এবং খেলে যাচ্ছে শুধু তাদের নিজকেন্দ্রীক স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। আমরা বাংলাদেশিরা সহনশীল ধৈর্যশীল। অতিতেও আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি, অবশেষে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে প্রতিবাদও করেছি।
আমরা দেখেছি, শুনেছি ও পর্যবেক্ষণ করেছি ওই সব গুটিকয়েক লোকদের, দেখি তারা কী করে? তারা খেলছে রাজনীতি নামক একটি পোশাক পরে। ওই পোশাকের জোরে মন্দের মন্দতম কাজটাই করছে তারা। আজ দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর হয়ে গেলো, কিন্তু দেশের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ভিন্ন ধরনের চমক তো অনেক দূরের কথা, সাধারণ গতিতেও দেশ এগুচ্ছে না। দুর্নীতি! দুর্নীতি! দুর্নীতিতে তলিয়ে যাচ্ছে গোটা জাতি। বাড়ছে না দেশের কর্মসংস্থান, শিক্ষার মানও কমে যাচ্ছে শুরু এক রাজনীতি নামক ভাইরাসের কারণে। এই ভাইরাস গোটা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলছে। কর্মসংস্থানের অভাবে জীবন বাঁচাতে ওই রাজনীতিতে নাম লিখাচ্ছে বেকাররা। যদি দুর্নীতির মাধ্যমে হলেও জীবনকে পরিবর্তন করা যায়। তাই রাজনীতিকে নিচ্ছে অর্থ উপার্যনের মাধ্যম হিসেবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর এক জরিপে দেখা যায় ৯০ ভাগ নেতাকর্মী রাজনৈতিক দল তথা ক্ষমতায়নের রাজনীতি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। সে কারণেই যে যখন ক্ষমতায় যাচ্ছে, সেই তখন তার বিরোধীকে নির্যাতন-নিপীড়ন ও শোষণ করছে। অর্থাৎ গোটা দেশ এমন এক ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। তবুও সাধারণ জনগণ স্বপ্ন দেখছে নতুন এক সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের।
আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে অসম্মান করছি না। দলগুলোতেও সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি আছেন। কিন্তু তাদের পরিমাণ অতি নগন্য। কিন্তু তারা বার বার হার মানছে দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছে। তবে ওই দিন বেশি দূরে নয়, যে দিন জনগণ একজন একজন করে দুর্নীতিবাজকে প্রকাশ্যে গণধোলাই দিয়ে মারবে। এ সময় খুব সন্নিকটে। তাই সর্বস্তরের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি- নিজ কেন্দ্রিক ভালো হওয়ার জন্য। দেশ ও জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকায় এসে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করুন। তাহলে দেশ ও জাতি সারা জীবন আপনাদের সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করবে। দয়া করে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। আজ আপনি অত্যাচার করছেন কাল আপনার সন্তান অত্যাচারিত হবে।
পোশাকশিল্প আমাদের দেশের অহংকার, যা ভারত একশত বছর সাধনা করলেও আমার দেশের এ শিল্পের মানে আসতে পারবে না। নিজের দেশের শার্ট প্রবাসে বসে বেশি দাম দিয়ে কিনেও বিশ্বাস হয় না যে এটা আমার দেশের তৈরি যা ইউরোপের ফ্যাশান বাজারে তাল মিলিয়ে চলছে। তাও আবার বিশ্বে ফ্যাশানের রাজা ইতালিতে।
আর পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন আমাদের সুন্দরবন। এ বন আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ বনকে ঘিরে একটি পর্যটক অঞ্চল তৈরি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতো। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুযোগ করে দেয়া যেতো- চোখ বন্ধ করে। বিগত ৬ বছরে তার কিছুই না করে বরং তেল ফেলে পৃথিবীর মূল্যবান সম্পদের একটি সুন্দরবনকে আজ ধ্বংসস্তূপের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এমনকি ধর্ম চর্চার দিক থেকেও ভারতের ওপর নির্ভরশীল। বন্ধুত্বের সম্পর্ক আর দাসত্বের ভেতর বিশাল পার্থক্যে আছে। তবে ভারতের সরকার ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক চর্চা, অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।
পরিশেষে বলতে চাই : আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন নাগরিক এবং
সংবিধানের ৭ এর (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমিও দেশের একজন মালিক।
আমি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিদ্যুৎ আমিও চাই। কিন্তু সুন্দরবন ধ্বংস করে আমার বিদ্যুৎতের প্রয়োজন নেই।
রাকেশ রহমান (প্রবাসী লেখক)
rakesh_rahman@libero.it