জঙ্গি ইস্যু : সতর্ক সিলেটের ৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুলাই ২০১৬, ২:০৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
জঙ্গি হামলার ঘটনায় জড়িত হিসেবে যাদের নাম ওঠে এসেছে তাদের বেশিরভাগই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এছাড়া নিঁখোজ থাকাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীকে সোমবার রাতে আটক করেছে পুলিশ।
এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে সিলেটের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। জঙ্গিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতা ঠেকাতে গ্রহণ করা হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ক্যাম্পাসে দীর্ঘ সময় ধরে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করছে সিলেটের চার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় গত ১ জুলাই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আলোচনায় উঠে আসে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। সে রাতে ওই রেস্তোরাঁয় সপরিবারে অবস্থান করে পরদিন সকালে বেরিয়ে আসা নর্থ সাউথের শিক্ষক হাসনাত করিমের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসে গণমাধ্যমে। এর কিছুদিন পর জঙ্গিদের বাসা ভাড়া দেয়া ও তথ্য না রাখার অভিযোগে আটক করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য গিয়াস উদ্দিন আহসানকে। এছাড়া সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় জড়িত কয়েকজন বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হওয়ার খবর প্রকাশ পায় গণমাধ্যমে।
এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় সরকার কঠোর নজরদারিতে এনেছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সাথে বৈঠক করে জঙ্গি বিস্তার রোধে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এসব নির্দেশনা পাওয়ার পর সেগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছে সিলেটের ৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
সোমবার রাতে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল করিমকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। জঙ্গি দমনে গৃহিত পদক্ষেপ সম্পর্কে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, “সরকারের নির্দেশনা আমরা অনুসরণ করছি। ইতিমধ্যে লাগাতার অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা করা শুরু হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করা হবে। পাশাপাশি ইউনিভার্সিটির ভেতরের নিরাপত্তায় সার্বক্ষনিক সিসি ক্যামেরা চালু আছে। আর জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে গত ১ সপ্তাহের মধ্যে আমরা ২টি জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশ করেছি, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা অংশ নিয়েছেন। যে ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ, তার ব্যাপারেও খোঁজ নিচ্ছি আমরা।”
নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফ ইকবাল বলেন, “সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ ইস্যুকে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছি। আমাদের ইউনিভার্সিটিতে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে, যারা ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করেছেন। গত কিছুদিন ধরে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা অনুযায়ী তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে ইউনিভার্সিটিতে এসে দেখা করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষকদের তথ্যাবলী সংরক্ষন করা ও আগামীতে শিক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। এছাড়া ইউনিভার্সিটিতে বহিরাগত কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। পূর্বের ৮টি সিসি ক্যামেরার সাথে বর্তমানে যুক্ত করা হয়েছে নতুন আরো ৫টি সিসি ক্যামেরা। পাশাপাশি চলতি মাসে শিক্ষার্থীদের সাথে একটি সভা করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান নিতে এবং কোনো সহপাঠীর গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে তার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্সের পরিচালক মো. তারেক উদ্দিন তাজ বলেন, “মন্ত্রনালয় থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছি। আজকেই (বুধবার) এক সভায় ইউনিভার্সিটিতে ৭ সদস্য বিশিষ্ট ‘জঙ্গি বিরোধী কমিটি’ গঠিত হয়েছে। কমিটির সদস্যরা গত ১০ দিন বা তার বেশি সময় ধরে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা করে এ ব্যাপারে তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সকল তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। ক্যম্পাসে প্রবেশমুখের নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে এবং ভেতরে প্রয়োজনীয় সিসি ক্যামেরা সক্রিয় আছে।”
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পরিচালক (প্রশাসন) তারেক ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত রয়েছে তাদের ব্যাপারে নোটিশ টানানো হয়েছে। অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথেও কথা বলা হবে। তারা উপযুক্ত কারণ দেখাতে ব্যর্থ হলে বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হবে।