ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জুলাই ২০১৬, ৭:২৬ অপরাহ্ণ
জুবায়ের আহমেদ, লন্ডন থেকে: গুলশান হামলার পর নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশীদের সকল ধরনের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া, ক্রিকেট সফর বাতিল ও প্রবাসীদের ছুটিতে দেশে না যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে । তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
দেশের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার না হওয়া পর্যন্ত বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানী তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িকভাবে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের আসন্ন বাংলাদেশ সফর বাতিলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে আগামী ছুটিতে ব্রিটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রবাসীরা বাংলাদেশে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
জানা যায়, জাপানের পোশাকের ব্র্যান্ড ইউনিক্লো বলছে, তারা অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশে সব ধরণের বাণিজ্যিক সফর বাতিল করছে। সুইডেনের এইচএন্ডএম-সহ অন্য যেসব নামী বিদেশী পোশাক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে ব্যবসা রয়েছে তারা বলছে তাদের কার্যক্রম বাংলাদেশ থেকে নিরাপদ কোন দেশে সরিয়ে নেবার আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির খাতটি ২৬ বিলিয়ন ডলারের। এটা পৃথিবীর সবচাইতে বড় তৈরি পোশাক নির্মাতা দেশগুলোর একটি। দেশের শতকরা আশি ভাগ রপ্তানি আয়ই হয় তৈরি পোশাক খাত থেকে। আর চল্লিশ লাখের মত মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এই খাতটি।
এদিকে ইংল্যান্ড ক্রিকেট ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের আসন্ন সফর বাতিলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া দলের। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে তারা অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে। পরবর্তীতে সেই সফর ২০১৭ সালের জুলাই মাসে করার কথা জানায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু গেল শুক্রবার গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার পর এই সফরের বিষয়টিও পুনর্বিবেচনা করছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
এ বিষয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারছি। আমরা চেষ্টা করব বাংলাদেশ সফরে যেতে। তবে আমরা অস্ট্রেলিয়ার সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন ও ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স এন্ড ট্রেডের উপদেশ মেনে চলব। পাশাপাশি আমরা আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাছ থেকেও বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টি জানার চেষ্টা করব। তারা কী প্রতিবেদন দেয় সেটার উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি।’
চলতি মাসের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে ইংল্যান্ডের। কিন্তু গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার পরে তারাও বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে। এমন কী ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়ান মরগান বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।অস্ট্রেলিয়ার সফর তো বেশ দূরে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ইংল্যান্ড দল বাংলাদেশ সফরে আসে কি-না সেটাই এখন দেখার বিষয়।
অপরদিকে ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসরত বিপুল সংখ্যক প্রবাসী আগামী ছুটিতে দেশে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা ভুগছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। মা মাটির টানে দেশে যাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকা প্রবাসীরা চলমান পরিস্থিতিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। প্রবাসী আতিকুর রহমান নামর বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে দেশে যাওয়ার আশায় ছিলাম, গুলশান হামলার পর দেশের সাম্প্রতিক অবস্থায় আমি শংকিত। এরূপ পরিস্থিতিতে দেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপত্তা ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি না হলে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আশ্বাস প্রদানের পরও বিদেশীরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তারা দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘন ঘন পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে ইতালী, জাপান, সুইডেনসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের সংবাদ মাধ্যম গুলশান হামলাকে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করেছে। হামলা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি তাদেরকে হতাশ করেছে। স্কাই নিউজ ও আর টি নিউজের সংবাদ বিশ্লেষণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আলোচকরা। এমন পরিস্থিতি শুধুমাত্র জাতীয় ঐক্যেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। তারা বাংলাদেশের সংকীর্ণমনা রাজনীতিকে জাতীয় ঐক্যের প্রধান অন্তরায় উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলতে না পারলে সন্ত্রাস নির্মূল সম্ভব হবে না।