রাজধানীতে মডেল কন্যার ‘আত্মহত্যা’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০১৬, ৮:০৩ অপরাহ্ণ
রুদ্র মিজানঃ
মডেল সিনহা রাজ। পুরো নাম মাহাতারা রহমান শৈলী। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বিয়েও দিয়েছিলেন তাদের পছন্দে। সেই সংসার ভেঙে নতুন সংসার গড়েছিলেন অভিজিতের সঙ্গে। আগের সংসারে একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তানও রয়েছে। নতুন সংসার গড়ার পর স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজ করতেন মিডিয়ায়। স্বামী অভিজিৎ অভিনয় করেন বিভিন্ন নাটকে। পরিচালনাও করেন। ওই জগতে তার নাম অভিজিৎ অভি। মঙ্গলবার রাত ১২টার পরে মহাখালীর দক্ষিণপাড়ার ভাড়া বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সিনহাকে দেখতে পেয়ে অভিজিৎ ও প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে মহাখালী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। পুলিশ অভিজিৎ অভিকে গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল সিনহার মহাখালীর দক্ষিণপাড়ার ১০৫/৩ নং বাসায় গিয়ে দেখা যায় তালা দেয়া। ওই বাড়িতেই অভি ও সিনহা সাবলেট হিসেবে ভাড়া থাকতেন হৃদয় নামে এক টেলিভিশনের কর্মচারীর সঙ্গে। গত মে মাসে চতুর্থ তলার ওই ফ্ল্যাটের দুটি কক্ষের একটি ভাড়া নেন তারা। বাড়ির মালিক আবদুল মালেকের পরিবার থাকেন দ্বিতীয় তলায়। তার স্ত্রী আসমা বেগম জানান, চতুর্থ তলা থেকে প্রায় রাতেই ঝগড়ার শব্দ শুনতেন তারা। সিনহা ও অভি প্রায় প্রতিরাতেই ঝগড়া করতেন। ওই বাসার অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা তাদের আচরণে অত্যন্ত বিরক্ত ছিলেন। কিন্তু কি নিয়ে তারা ঝগড়া করতেন এ বিষয়টি জানা নেই তাদের। পুলিশের দেয়া ভাড়াটিয়াদের তথ্য ফরম অভিকে দেয়া হয়েছিল পূরণ করে দেয়ার জন্য। ওই ফরম আজ পর্যন্ত পূরণ করে দেয়নি। এসব কারণে হৃদয়ের মাধ্যমে অভিকে বাসা ছাড়তে বলা হয়েছিল।
মঙ্গলবার রাতের ঘটনা সম্পর্কে আশেপাশের লোকজন জানান, রাত ১২টার দিকে পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন অভি-সিনহা দম্পতি। বাড়ির পাশের বটতলা এলাকায় পৌঁছলে দুজনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। রাস্তার মধ্যেই সিনহাকে মারধর করেন অভি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যান সিনহা। বাসার মালিকের মেয়ে সুমি জানান, এসময় সিনহার চিৎকার শুনেছেন তারা। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন- ‘তুই আমার গায়ে হাত তুললি কেন, রাস্তায় আমাকে মারলি কেন?’ এসময় প্রতিবেশী একজন ফোনে ওই বাড়ির মালিকের স্ত্রী আসমা বেগমকে বিষয়টি জানান। শব্দ শুনে ও ফোনে পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দরজা খুলেন তারা। এসময় অভিকে দ্রুত উপরে উঠতে দেখেন সুমি। তার হাতে ছিল একটি ব্রিফকেস। এর পাঁচ মিনিট পরেই আবার চিৎকার শুনতে পান তারা। আশেপাশের সবাই চতুর্থ তলায় উঠে দেখতে পান অভি ও হৃদয়ের স্ত্রী মৌ কান্নাকাটি করছে। দরজার লক ভাঙার চেষ্টা করছে। অভি তখন জানান, দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেয়েছেন সিনহা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। এসময় দরজার লক ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় সিনহাকে উদ্ধার করে মহাখালী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে যান অভি ও হৃদয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তাকে। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে নিহতের স্বামী অভিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।
যে কক্ষে সিনহা থাকতেন ওই কক্ষে ঢুকে দেখা গেছে, ছড়ানো ছিটানো কাপড়-চোপড়। ওয়্যারড্রবের একটি ড্রয়ার খোলা রয়েছে। ছোট কক্ষে একটি খাট, ফ্রিজ, ওয়্যারড্রব ছাড়া তেমন কিছু নেই। পুলিশ জানিয়েছে, দুজনের পরিবারে আর্থিক সংকট ছিল চরমে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হতো। বনানী থানার উপ-পরিদর্শক শ্রীদাম জানান, অভিজিৎ জানিয়েছেন আর্থিক সংকটের কারণে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। সিনহা ও অভি মিডিয়ায় কাজ করলেও তেমন কোনো পরিচিতি নেই তাদের। প্রতিবেশীরা জানান, অভির মুখে শুনেছেন তিনি নাটক পরিচালনা ও অভিনয় করেন। তার স্ত্রী মডেলিং করেন। পুলিশ জানিয়েছে, সিনহা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন। এ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন ছবি পেয়েছেন তারা। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন অভিজিৎ অভি। ভালোবাসার শেষপ্রান্তেসহ কয়েক নাটক পরিচালনাও করেছেন। অভিনয়ের সুবাধে অভিজিতের সঙ্গে অনেক মেয়েদের ভালো সম্পর্ক ছিল। পুলিশের ধারণা এ নিয়েও দুজনের মধ্যে কলহ হতে পারে। এ বিষয়ে অভিজিৎকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিনহার বাবা সাবেক পুলিশ সুপার মতিউর রহমান বলেন, দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। অভি ছিল মূলত কর্মহীন। যৌতুকের জন্য সিনহাকে মারধর করতো সে। এ কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।