নীরবে চলে গেলেন সিলেটের ‘গরিবের ডাক্তার’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ১:৫৯ অপরাহ্ণ
জুয়েল সাদাত:
আমার দেখা একজন অনন্য মানব৷ আমি সচরাচর কোন ব্যাক্তি জীবিত বা মৃত নিয়ে লিখি না। কারন যদি কম জেনে লিখি তাহলে মারাত্মক ভুল হবে। তবে মাঝে মাঝে ফরমায়েশি লেখা লিখি।। বেশ কয়দিন থেকে শহিদ মামা অসুস্থ ছিলেন। উনাকে নিয়ে না লিখলে লেখালেখির জীবনটাই বৃথা। আমি বড় হয়েছি মালনিছড়া চা বাগানে তিনি মজুমদারিতে থাকতেন। আমাদের দুরত্ব পায়ে হাটা।
মালিনীছড়া চা বাগানে কিছু আলোকিত পরিবার ছিল তাই মজুমদারীর আম্বরখানা,কলোনি,খাসদবির,চৌকবদেখির মানুষের সাথে আমাদের আত্মার সম্পর্ক। ডাক্তার বলতে ঐ এলাকায় তিনজন। দুই বাগানের দুই ডাক্তার ও ডা শহিদ। তবে ডাঃ শহিদ ছিলেন সবার ডাক্তার। ২৪ ঘন্টার ডাক্তার। ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি তিনি গরিবের ডাক্তার। একটা মানুষ কতটা মহত ও মহান হতে পারে উনাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। আমাদের আত্বীয়তা তিন রকম দেখেছি।
যাক শেষ ধাপে তিনি হয়ে গেলেন “মামা শশুর”, বিয়ের অন্যতম ঘটনা হল, মেয়ের পিতা উনাকেই আমার কথা জানতে গেলে তিনি উচ্ছসিত প্রশংসা করেন আমার। মেয়ের পক্ষে হয়েও তিনি আমার রেফারেন্স। উনার আরেকটি গুন ছিল তিনি কোন হাফিজ ও তার পিতা মাতার নিকট থেকে টাকা নিতেন না। ঠিক এরকমই আরেক চিকিৎসক ডেন্টিষ্ট ডা এ হাসান ( বর্তমানে আমার ফ্লোরিডায়, আমার আত্বীয়) ডা হাসানও সারা জীবন হাফিজ দের নিকট ও তার পিতা মাতার নিকট থেকে ভিজিট নিতেন না । কতটুকু আদর্শবান চিকিৎসক ছিলেন ভাবলেই চোখে পানি আসে। আর আমাদের সমাজের ডাক্তার রা টাকা ও কমিশনের জন্য্ রাতে ঘুমান না, ঘুমালে কম রোজী রোজগার হবে।। ডাঃ শহিদ ছিলেন এয়ারপোর্ট থেকে আম্বরখানা পুরো কয়েক লাখ লোকের ডাক্তার। বস্তির মানুষ -রিস্কা ড্রাইভার -মেস্তরী, দিন মজুর ড্রাইভার শ্রমজীবি, বাড়ির কাজের মানুষ সবার ডাক্তার,, একজন জান্নাতি মানুষের অধিকারী।
সিলেটের কবি সাহিত্যিক লেখক সাংবাদিক,শিল্প সাহিত্যের লোকজন এর সর্দি কাশি হলেও উনার কাছে । উনার রোগীদের কাছে পাওনা কয়েক কোটি টাকা হবে। কারন তিনি কেউ দিলে ভিজিট নিতেন। টাকার জন্য বলতেন না। টাকা গুনেও দেখতেন না। না দিলেও রাগ করতেন না। আমার দেখা উনার কাছে মানুষ যেত ভরসা করে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ভরসার জায়গা। গরিব মানুষ গাছের কদু,সবজি নিয়ে আসত। বকা দিতেন বাসার দরজায় রেখে যেত। সারা দিন সকাল দুপুর রোগী দেখতেন, সেবা করতেন। কখনও বিরক্ত হত না। উনার পরিবারও বিরক্ত হত না। বাসার দরজার সামনে সব সময় রোগীরা বসে থাকত, কোন পারসোনাল সময় ছিল না। আমি যে ভাবে লিখছি ঘটনাটা সে ভাবে সহজ না। গভীর রাতে ও চলে যেতেন যে চাইত। কয়েক লাখ লোকের সেবা করেছেন। অনেক বিত্তবান ও আসতেন উনার কাছে টাকা দিতে চাইলেও না করতেন। এত সাবলিল একজন মানুষ, মজুমদারী এলাকাটা বলতে ডাঃ শহিদ খান নামে সুপরিচিত ছিল। উনার নামকে পুজি করে আমরা একটা হসপিটাল করেছিলাম “গাজী বোরহান উদ্দিন হসপিটাল”।
হসপিটালিটি উনার জনপ্রিয়্তায় বেশ দাড়িয়ে গিয়েছিল, ২০০০ সালের শেষের দিকে। , উই পোকায় ( অ ব্যবস্থাপনায়) পুরো হসপিটাল টা খেয়ে ফেলেছিল। সেটা বিরাট ইতিহাস। উনার নিকট রোগী আসত কোম্পানিগঞ্জ,এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে। সহজ সরল সাবলিল একজন মানুষ সংসার- বিত্ত- প্রতিপত্তি এর প্রতি উদাসিন। উনি চাইলে সিলেটে তিন চারটি ক্লিনিক,ডাযগনস্টিক সেন্টার ফার্মেসী করতে পারতেন। দু একবার উনাকে জড়িত করাও হয়েছিল, তিনি ছিলেন সামান্য কিছুদিন, থাকতেন না। বৈষয়িক বিষয়টি ছিল উনার জীবনে আপেক্ষিক। উনার মুত্যুর খবরে পুরো সিলেট জুড়ে শোকের ছায়া।
এত অমায়িক মানুষ ছিলেন,উনার একটা নিক নাম ছিল “ধনাই”। উনার একটা বড় পরিবার ৫ মেয়ে ২ ছেলে, পরিবারকেও যথেষ্ট সময় দিতেন না। ডঃ শহিদ খানের ৭ ভাই ৬ বোন। ৭ ভাইয়ের মধ্যে ডাঃ শহিদ খান সহ ৬ ভাই মৃত্যু বরন করেছেন। একমাত্র ভাই মুরাদ মামা ( আলাউদ্দিন সুইটস,নিউইয়র্ক ) নিউ ইয়র্ক প্রবাসী, আজ দেশে আছেন। মজুমদারী ( লিচু বাগান) এলাকার একটি আদর্শ পরিবার। আমার মামা ডাক্তার শহিদ খানের জন্য্ দোয়া কামনা করছি। হাজার হাজার গরিব দুঃখি মানুষের দোয়ায় তিনি জান্নাতুন ফেরদৌস এর বাসিন্দা হবেন। উনার জন্য সবার নিকট দোয়া চাই।