কামরানকে টক্কর দিতে মাঠে আরো ৩ নেতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০১৭, ৪:১৮ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগেভাগেই জমিয়ে তুলেছেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। দলের কাছ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়ার পরপরই তিনি অনানুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কামরানের এই তৎপরতায় নড়েচড়ে বসেছেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অপর তিন নেতা। তারাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে সরব। এতে করে সিলেটে অনেক আগেই জমে উঠলো সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দলের নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে চাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে ওয়ার্মআপটা সেরে নিতে। এ কারণে ইতিমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আগে থেকেই প্রার্থীদের মাঠে নামার নির্দেশনা দিয়েছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ এখনো বাকি ৯ থেকে ১০ মাস। এরপরই নির্বাচন। কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে কাজ শুরু করেছেন কামরান। তিনি ইতিমধ্যে সিলেট নগরীর দক্ষিণ অংশের তিনটি ওয়ার্ড ঘুরেছেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে তাদের কাছাকাছি যাচ্ছেন। কামরানের এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বসে নেই সিলেটের অপর তিন নেতা। আওয়ামী ঘরানার এই তিন নেতাও ইতিমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে মতবিনিময় ও সভা করে যাচ্ছেন। এরা হলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম। গতকাল মানবজমিনের পক্ষ থেকে এই তিন জনের সঙ্গে কথা বললেও তারা মেয়র পদে নির্বাচন করতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছেন, দলের কাছে তারা মনোনয়নও চাইবেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ সিলেট মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগে অনেক দিন যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৭৭ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আসাদ উদ্দিন আহমদ। মদন মোহন কলেজের নির্বাচিত জিএস ও ভিপি ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৬ সালে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর রাজনীতিতে নতুন মেরূকরণ শুরু করেন আসাদ। সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিতে ছাত্রলীগের পর থেকে তার কোনো নিজস্ব বলয় ছিল না। কিন্তু এই ক’বছরে তিনি সিলেটে তার একটি নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। বলয় তৈরি করলেও তিনি স্বচ্ছ ধারার রাজনীতি করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আসাদ উদ্দিন আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এখনো ৯-১০ মাস বাকি। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করবে। আর আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূল থেকে তিন নেতার নাম কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে। কেন্দ্রের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়ে যাকে মেয়র পদে প্রার্থী করবে তিনি দলের হয়ে নির্বাচন করবেন। এবং দলের সবাই তার পক্ষে কাজ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনী মাঠে আছি। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি দলের কাছে প্রার্থিতা চাইবো। দলই সিদ্ধান্ত নেবে।’ সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের তিন বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবার দলের কাছে মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি এখন সিটি করপোরেশনের সিনিয়র কাউন্সিলর। জনগণের সঙ্গে তিনি ২০০৩ সাল থেকে সম্পৃক্ত। ওই বছর তিনি প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারাগারে থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। শেষদিকে এসে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে দুই দফা নির্বাচনে তিনি বিশাল ভোটের ব্যবধানে সিটি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। আজাদুর রহমান আজাদ বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। এর আগে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সিলেট জেলা যুবলীগের দীর্ঘ দিনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আজাদুর রহমান আজাদের দাপট এখনো রয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পারিবারিকভাবে তার পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। আজাদুর রহমান আজাদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তিনি তিন বারের কাউন্সিলর। জনগণের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। সুতরাং তিনি আগামী সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দোয়া নিয়ে এবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন সিলেট ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম। তিনি সিলেট ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি। মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম ক্রীড়া সংগঠকের পাশাপাশি একজন ব্যবসায়ীও। মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচন করতে প্রস্তুত। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আশীর্বাদ নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে মনোনয়ন চাইবেন। – মানবজমিন।