ভোটের উৎসব শুরু, গণভোট ইস্যু ম্লান!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ৬:২১ অপরাহ্ণ
আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে গত সোমবার। ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনানুষ্ঠানিক একটি প্রার্থী তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। একই দিনে দুই দলের এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর পাল্টে গেছে মাঠের চিত্র। হাওয়া লেগেছে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পালে। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা ভোটের উৎসবে মেতে উঠেছেন। এমন পরিস্থিতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ইস্যু কিছুটা ম্লান হয়ে পড়েছে কি না এমন আলোচনা উঠেছে দেশের রাজনীতিতে। বলা হচ্ছে, মাত্র দুদিন আগেই গণভোট আগে নাকি জাতীয় নির্বাচনের দিন হবে-এমন আলোচনায় সরগরম ছিল দেশের রাজনীতি। এ নিয়ে হুমকি পাল্টা হুমকিও চলছিল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে। এনসিপি অবশ্য গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে দুই দলের মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে কথা বলছিল।
ওদিকে, রাজনৈতিক এই বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে সরকারও বসে থাকতে পারেনি। উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে একরকম বাধ্য হয়েছে। সমঝোতার পথ বেছে নিতে সরকার দলগুলোকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে।
কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে অনেকটা হঠাৎই ২৩৭ জনের একটি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিএনপি। সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করে। সোমবার একই দিনে এনসিপির সম্ভাব্য একটি তালিকা গণমাধ্যমে আসে। এই তালিকা দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রই গণমাধ্যমকে দিয়েছে বলে মনে করা হয়। অনেকের মতে, এ ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে যে, শুধু বিএনপি নয়; এনসিপিও নির্বাচনের ব্যাপারে বেশি তৎপর।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওমরাহ শেষে ঢাকায় ফিরে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেছেন, জামায়াত শিগগির তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। যদিও এক বছর আগে ফেব্রুয়ারিতে দলটি সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দেয়। সেই থেকে নির্বাচনি আসনগুলোতে জামায়াতের প্রার্থীরা গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, শুধু প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নয়, পুরো দেশেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার কথা বলেছে। সে হিসাবে বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন মাস। এই সময়ের মধ্যে আরেকটি গণভোটের কথা কেউ এখন আর ভাবছেন না। সবাই তাকিয়ে জাতীয় নির্বাচনের দিকে।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে গত সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে সমঝোতার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানানো হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লিখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়।
এতে লক্ষ্য করা হয় যে ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। এ ছাড়া গণভোট কবে হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে, এসব প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য বলেছে। তা না হলে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যা করার করবে। অর্থাৎ সরকার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরের সূত্রগুলো বলছে, নীতিনির্ধারকরা একই দিনে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা ভাবছেন। এক্ষেত্রে তারা বিএনপিকে উচ্চকক্ষে পিআর মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাতে পারেন। নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন, এ দুই ইস্যুতে সমঝোতায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বর্তমান টানাপোড়েন দূর হবে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার সাম্প্রতিক মতানৈক্যের অবসান হতে পারে। অবশ্য নির্ভরযোগ্য অপর একটি সূত্রের দাবি, অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ইতোমধ্যে এক ধরনের সমঝোতা সম্পন্ন হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরেকটা গণভোটের সময় এখন আর নেই এবং মানুষ এ নিয়ে চিন্তা করছে না। সারা দেশের মানুষের এখন সব মনোযোগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে। বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা, এনসিপির প্রার্থীদের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ এবং দলীয় প্রার্থীদের বিষয়ে জামায়াতের আমিরের গতকালের ঘোষণা- নির্বাচনমুখী করেছে গোটা দেশকে।








