কাঁথা সেলাইয়ে নারীদের জীবন-জীবিকা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৫ অপরাহ্ণ

সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
কাঁথা সেলাই করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অভাবী পরিবারের নারীরা। গ্রাম ও শহর শীতের আগমনে শুরু হয় কাঁথা সেলাইয়ের এই কাজ। এসব কাজ করে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পরিবারের ছেলেমেয়ের লেখাপড়াসহ সংসারের সচ্ছলতা আনছেন। সরজমিন দেখা যায়, সৈয়দপুর পৌরসভা ও উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে এসব নারীরা কাজ করে চলেছেন। নারীরা মাদুর পেতে পুরনো কাপড় দিয়ে তৈরি করছেন কাঁথা। কেউ বা পুরনো কাঁথাকে সেলাই বা রিপু করে নিয়ে ব্যবহার উপযোগী করে নিচ্ছেন। কেউ গাছের নিচে কিংবা বারান্দায় বা সুবিধাজনক স্থানে বসে এসব কাঁথা সেলাই করছেন। উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামের আলেয়া খাতুন জানান, স্বামী মারা গেছে অনেক আগে। তিনি বলেন, নাতনিকে নিয়ে বাড়িতে থাকি। শীতের সময় কাঁথা সেলাই করে আমার সংসার চলে। সাধারণ ব্যবহৃত কাপড়ে এরূপ কাঁথা সেলাই করতে ৮-১০ দিন লেগে যায়। তবে আকার ভেদে কাঁথা তৈরিতে সময় কমবেশি হয়ে থাকে। একটি নরমাল কাঁথা তৈরিতে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা চুক্তিতে কাজ করেন তিনি। কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, অবসর সময়ে বাড়তি আয়ের জন্যই এই কাঁথা সেলাই বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর পৌরসভার কয়া গোলাহাট এলাকার গৃহবধূ সিতারা বেগম, রওশনী ও চাঁদনী বেগম বলেন, পুরনো অথবা নতুন কাপড় দিয়ে মূলত এসব কাঁথা তৈরি করা হয়। প্রথমে নতুন পুরাতন কাপড়ের কয়েকটি স্তর একসঙ্গে করে বাউন্ড্রি সেলাই করা হয়। তারপর চলে আসতে আসতে সেলাইয়ের কাজ। যদি নকশী কাঁথা হয় তাহলে আগে বিভিন্ন নকশার ছক আঁকাতে হয়। আর এ ছকের ওপর বিভিন্ন রংয়ের সুতা দিয়ে নকশা ফুটিয়ে সুজনি ফোঁড়, কাঁথা ফোঁড় ও বকুল ঝাড় কাঁথা তৈরি করা হয়। যদিও এখন কেউ নকশী কাঁথা বানাচ্ছেন না বলে জানান তারা। অপর গৃহবধূ নুরজাহান ও শবনম পারভীন বলেন, কাঁথা শুধু বাড়ির জন্যই তৈরি করি তা নয়। আমরা অনেকে মজুরি হিসেবেও কাঁথা সেলাই করে দিই। ৪ বাই ৬ ফুট আকারের কাঁথা ৫শ’ থেকে শুরু করে আকার ভেদে ৮-৯শ’ টাকা পর্যন্ত মজুরি হয়ে থাকে। অবসর সময়ে এক-একটি কাঁথা তৈরিতে এক সপ্তাহ থেকে দশদিন সময় লেগে যায়।
সৈয়দপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক ও নারী উদ্যোক্তা শিউলী বেগম বলেন, এক সময় গ্রামীণ ঐতিহ্য ছিল নকশি কাঁথা। গ্রামের মেয়েরা তাদের মনের মাধুরি মিশিয়ে সেলাই করতেন। যেখানে প্রতিটি ফোঁড়ে গেঁথে থাকতো প্রিয়জনদের বলা না বলা কথা। সেইসব নকশী কাঁথা এখন অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। নকশী কাঁথা না হলেও সাধারণ কাঁথা এখনো শীতের আগে শহর-গ্রমের নারীরা তৈরি করে আসছেন। তিনি বলেন, এসব কাঁথার শোরুম তৈরি হয়েছে বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরে। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কারুকাজ করা কাঁথা বড় বড় শপিংমলে যাচ্ছে। যারা এসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা বিসিক কর্মকর্তা নূরেল হক বলেন, এসব কাঁথা তৈরিসহ নানা কাজে সহযোগিতা দেয়া হয়ে থাকে। কেউ প্রয়োজন মনে করলে সাহায্য ও সহযোগিতা নিতে পারেন। প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।







