সিলেটে ভোটের মাঠে শোডাউনে বিএনপি’র প্রার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ওয়েছ খছরু:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ভোটের মাঠে বিএনপি’র প্রার্থীদের প্রতিপক্ষ কারা সেটি ইতিমধ্যে জানা গেছে। কারণ ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরা তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। বড় কোনো পরিবর্তন না এলে ঘোষিত প্রার্থীরাই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। সুতরাং বিএনপি’র প্রার্থীদের কাছে ভোটের প্রতিপক্ষ ক্লিয়ার। বিএনপি’র নেতারা বলছেন; আসন্ন নির্বাচনে একক প্রার্থী নিয়ে যখন বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবে তখন সামনের পথ অনেকটা সহজ হবে। তবে তার আগেই বিএনপি’র প্রার্থীদের লড়াই করতে হচ্ছে নিজ দলের প্রার্থীদের সঙ্গে। দলের ভেতরের অভ্যন্তরীণ লড়াই। সেজন্য দলের তরফ থেকে শেষ মুহূর্তের হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে দলের শীর্ষ তরফ থেকে বেশকিছু গোপন তদন্ত কাজ শেষ করা হচ্ছে। ভোটের মাঠে প্রধান প্রতিপক্ষ জামায়াত সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে অনেক বেশি নির্ভার বিএনপি। এখন প্রার্থী বাছাইয়ের পালা। বলা হচ্ছে; চলতি মাসের শেষে কিংবা আগামী মাসের প্রথমার্ধ্বে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারে বিএনপি। আর এই সময়ে নজর কাড়তে সিলেট বিএনপি’র সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা মাঠেই জোর দিয়েছেন বেশি। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে বিএনপি’র প্রার্থীদের শোডাউন।
প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও শোডাউন করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। শোডাউনে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে সিলেট-৬ আসন। এ আসনে হিসাব এবার অনেকটা ক্রিটিক্যাল। কার ভাগ্যে জুটে মনোনয়ন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। মাঠের শোডাউন থেকে গ্রাম পর্যায়ের প্রচারণাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী। গতকাল বিয়ানীবাজারে শোডাউন দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলার সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম। এর আগে এ আসনের সম্ভাব্য দুই প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী ও জেলার সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীও শোডাউন দিয়েছেন। ৩১ দফার পক্ষের এই শোডাউন ছিল লোকে লোকারণ্য। সিলেট-৫ আসনেও চলছে শোডাউন। এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ চাকসু মামুনের পক্ষে কয়েক দফা শোডাউন দেয়া হয়েছে। জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটে আলাদাভাবে শোডাউন দিয়েছেন আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী ও জেলার যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু।
মাঠে নামা সংযুক্ত আর আমিরাত বিএনপি’র সভাপতি জাকির হোসেন সম্প্রতি সময়ে কয়েকটি সভা করেছেন। সে সভাগুলো এলাকার মানুষের নজর কেড়েছে। তিনি স্থানীয় বিএনপিকে ভোটের জন্য একত্রিত করার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন। জানান, ছোটোখাটো বিবাদ ভুলে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হলে এ আসনে ধানের শীষের জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। সিলেট-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী ইতিমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুরে ৩১ দফার পক্ষে একাধিক শোডাউন দিয়েছেন। এ আসনের ভোটব্যাংক হচ্ছে গোয়াইনঘাট। সেখানে তিনি ৩১ দফার লিফলেট হাতে নিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত চষে বেড়াচ্ছেন। শিগগিরই তার পক্ষে গোয়াইনঘাটে বড় শোডাউন দেয়া হবে। এ আসনের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী আব্দুল হেকিম চৌধুরীও নিজ বলয়কে নিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত। নানা ইস্যুতে তিনি গোয়াইনঘাটে শোডাউন করেছেন। আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন কয়েক দিন আগে গোয়াইনঘাট সদরে শোডাউন করেছেন। সিলেট-৩ আসনে ৩১ দফার প্রচারণাকে ঘিরে মূলত শোডাউন দিচ্ছেন প্রার্থীরা।
এ আসনে এলাকাভিত্তিক প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএম সালাম। লন্ডন থেকে ফিরে এসে নতুন করে প্রচারণায় নেমেছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএম মালিক। সর্বশেষ তিনি রেঙা মাদ্রাসায় গিয়ে মতবিনিময় করে এসেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি এক্টিভ জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী। তিনি প্রায় প্রতিদিনই এলাকায় এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাঠের প্রচারণায় চমক দেখাচ্ছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল। বিশেষ করে বিএনপি’র তৃণমূল ও অঙ্গসংগঠন নিয়ে তিনি নজরকাড়া প্রচারণা চালাচ্ছেন। নগর বিএনপি’র সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনানও প্রচারণায় গতি বাড়িয়েছেন। সিলেট-২ আসনে বিএনপি’র তরফ থেকে ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদী লুনার পক্ষে শোডাউন দেয়া হয়েছে।
বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের শোডাউনে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল। এ আসনে বিএনপি ছাড়াও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে শোডাউন করা হয়েছে। মায়ের পক্ষে এখন মাঠে নেমেছেন ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার। সিলেট-১ আসনে বিএনপি’র পক্ষ থেকে চোখে পড়ার মতো শোডাউন না হলেও প্রচারণায় এগিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা। সম্ভাব্য প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির পুজার আগে থেকেই নতুন করে মাঠে প্রচারণায় গতি বাড়িয়েছেন। প্রতিদিন তিনি নগরে ৫-৬টি করে অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। আর এসব অনুষ্ঠানে তিনি ৩১ দফার লিফলেট তুলে দিচ্ছেন জনগণের হাতে। এতে মিলছে সাড়াও। আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীও পূজায় ঘুরে বেড়িয়েছেন সিলেট নগর। এ ছাড়া নগরের ফুটপাথ হকারমুক্ত করা, অবৈধ যানবাহন নগরের সড়ক থেকে সরাতে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছেন। ভোটের সঙ্গে সঙ্গে নগরকে জঞ্জালমুক্ত করতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার অনুসারীরা।







