সিলেটের কিন ব্রিজে অপরাধীদের আড্ডা, মিনি হাটে মেলে সবকিছুই
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুলাই ২০২৫, ৫:১৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা কিন ব্রিজ যেন এখন হকারদের হাতে বন্দি। বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে পদচারী সেতুতে পরিণত হওয়া নব্বই বছরের এই লোহার সেতু এখন যেন মিনি হাট। রাতে বসে অপরাধীদের আড্ডা, চলে ছিনতাই।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচল বন্ধ করে কিন ব্রিজ খুলে দেওয়া হয় শুধুমাত্র পথচারীদের চলাচলের জন্য। উদ্দেশ্য ছিল নিরাপদ ও আরামদায়ক পদচারণার সুযোগ তৈরি করা; কিন্তু বাস্তবতা হলো- এই সেতু দিয়ে এখন হেঁটে চলাই যেন বড় দুঃসাহস।
কারণ দিনের বেলায় পুরো সেতু যেন রূপ নেয় এক অবৈধ বাজারে।
শাকসবজি থেকে শুরু করে শুঁটকি, কাপড়, ইলেকট্রনিক্স, খেলনা এমনকি মোবাইল সিম-সবই পাওয়া যায় এই ব্রিজের ওপর। শতাধিক হকার প্রতিদিন ব্রিজের দুই পাশে দোকান বসিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন।
ক্রেতাদের ভিড়ে সেতুতে চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে নারী পথচারীদের পড়তে হয় চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলতে হয়, কোথাও নেই শৃঙ্খলা।
স্থানীয়দের প্রশ্ন- কিন ব্রিজ কি কিনে নিয়েছে হকাররা? তাই কেউ কিছু বলতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে, সিলেটের এই ঐতিহ্যবাহী সেতু ভবিষ্যতে কেবলই এক অব্যবস্থাপনার নিদর্শনে পরিণত হবে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা মাহবুবুল হক বলেন, এই ব্রিজ দিয়ে হাঁটা এখন দুর্বিষহ। হকাররা ডাকাডাকি করে, মাঝেমধ্যে রাস্তাও আটকে রাখে। নারী-শিশুরা ভয় পায় ব্রিজ পার হতে।
স্থানীয় আরও কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, হকারদের কারণে শুধু যাতায়াতের ভোগান্তিই নয়, সেতুর সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে সেতুর আশপাশ। পর্যটকরাও এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, আমরা হকার উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালাই। কিন্তু কিছুদিন পর আবার তারা ফিরে আসে। এবার আমরা আরও কঠোর অবস্থানে যাব।
এদিকে দিনের দুর্ভোগ পেরিয়ে সন্ধ্যা নামতেই সেতুটি যেন রূপ নেয় আরেক রূপে-রাতের আঁধারে বাড়ে ভয় আর আতঙ্ক। উঠতি বয়সি যুবকদের আড্ডা, মাদক সেবন, আর মাঝেমধ্যে চলে ছিনতাই। পথচারীরা জানান, কখন কার ফোন, টাকা, বা ব্যাগ হারিয়ে যাবে- বলা যায় না।
কদমতলী এলাকার শিক্ষার্থী রুবেল আহমদ বলেন, কয়েক দিন আগে আমার বন্ধুর চোখের সামনেই মোটরসাইকেলে করে এসে ফোন ছিনিয়ে নেয় এক যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গায়েব!
স্থানীয়রা দাবি তুলেছেন ব্রিজে বাড়াতে হবে পুলিশি টহল, বসাতে হবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। নইলে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিশেষ করে রাতে টহল বাড়ানো হয়েছে। আমরা সজাগ রয়েছি, কিন ব্রিজকেও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে নির্মাণকাজ শুরু হয় এই ব্রিজের। ১৯৩৬ সালে উদ্বোধনের পর থেকেই এটি সিলেটের অন্যতম ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত; কিন্তু হকার ও অপরাধীদের অবাধ দখলদারিত্বের কারণে সেতুটি হারাচ্ছে তার গৌরব, সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা। সুত্র-যুগান্তর