ওসমানীনগরে ব্যস্ত সময়েও হাসি নেই কামারিদের মুখে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০২৫, ২:২১ অপরাহ্ণ
জুবেল আহমদ:
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে সিলেটের ওসমানীনগরে কামার দোকানগুলো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টুং-টাং শব্দে মুখরিত কামার পল্লীর চারপাশ। দা, বঁটি, ছুরিসহ গৃহস্থালি নানা সরঞ্জাম বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে এখানকার কর্মকাররা।
এই ঈদকে সামনে রেখে কামারপল্লীতে চলছে হাঁপর টানা। পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে কামার তৈরি করছেন চাপাতি, ছুরি, চাকু, দা, বঁটিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। উপজেলার প্রত্যেকটা কামার দোকানে এখন চলছে এসব হাতিয়ার তৈরির ধুম। তবে, কয়লার মূল্য ও মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ব্যস্ত সময়েও হাসি নেই কামারিদের মুখে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বানিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর ও কুরুয়া বাজারসহ ছোট-বড় বাজারগুলোতে কামাররা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সারাবছর খুব একটা কাজ না থাকলেও কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে এই সময়টাতে বাড়ে তাদের কর্মব্যস্ততা। কয়লার আগুনে রক্তিম আভা ছড়ানো চাপাতি, বটি, ছুরির ওপর পড়ছে হাতুড়ির একের পর এক আঘাত। কেউ লৌহজাত সামগ্রী শান দিচ্ছেন, কেউ সহকর্মীকে সাহায্য করছেন। অধিকাংশের পরনে ময়লা লুঙ্গি ও গেঞ্জি, শরীরে কালি আর ঘামের দাগ। আরাম-আয়েশ, গোসল, পরিচ্ছন্নতা, সময়মতো খাওয়া-দাওয়া সব কিছুই যেন বন্ধ। কেবল কাজ সম্পর্কিত কথা ও ক্রেতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথাবার্তাই চলছে।
এদিকে, কোরবানি দাতারা পশু জবাইয়ের জন্য আকারভেদে এসব লৌহজাত সামগ্রী কিনতে ভিড় করছেন। ক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি। আর বিক্রেতারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোহা ও কয়লার দাম বৃদ্ধির কারণে তৈরিতে খরচ বেশি হচ্ছে।
তাজপুর বাজারে দা-বটি কিনতে আসা নাহিদ মিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, চাপাতির দাম একটু বেশি। ঈদ এলে প্রতি বছরই ছুরি, চাকুর দাম বেড়ে যায়।
গোয়ালাবাজারে বটি কিনতে আসা হুমায়ুন আহমদ নামের এক ক্রেতা বলেন, কিছু দিন পরেই ঈদ। গরু ও ছাগল জবাই দিতে এবং মাংস কাটতে প্রয়োজন চাকু ও ছুরির। সে কারণে বাজারে এসেছি দা, বটি ও ছুরি কিনতে। তবে গত বছরে এসব জিনিসের যে দাম ছিল তার চেয়ে এবারে দাম অনেকাংশে বেশি।
তাজপুর বাজারের কামার সুমন কর্মকার বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার কয়লা, লোহা, শান দেওয়ার পাথরসহ সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে। তবে মজুরি তেমন বাড়েনি। কাঁচামালের দাম বাড়লেও সেই অনুপাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা যাচ্ছে না। সারাবছর কিছু কাজ থাকলেও এখন আরও বেশি কাজ করতে হচ্ছে। এক কথায়, কোরবানির সময়টায় কামারপল্লীর পুরোনো জৌলুস ফিরে এসেছে।