‘সমঝোতায়’ সিসিকের পশুর হাট বিএনপি-ছাত্রদলের
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২৫, ১১:১৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) অস্থায়ী ছয়টি পশুর হাটের ইজারা পাচ্ছেন বিএনপি এবং ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা। সূত্র বলছে, সমঝোতার মাধ্যমেই তারা এসব হাটের ইজারায় অংশ নেন।
হাটের জন্য ৫৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়েছে মাত্র ১৮টি। এর মধ্যে দুটি ত্রুটিযুক্ত। তবে এবার একটি হাট চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে। তিনি গতবারের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি দরে হাটের ডাক নিয়েছেন। জানা গেছে, এলাকাভিত্তিক প্রভাবের কারণে সেখানে বিএনপির কেউ সমঝোতার প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পায়নি।
মঙ্গলবার দরপত্র খোলার পর বুধবার সকালে সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাট ইজারার কার্যাদেশ দেওয়ার কথা থাকলেও স্বাক্ষর না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার হাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।
অতীতে একচেটিয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নগরীর পশুর হাটগুলো ইজারা পেলেও এবার একটি ছাড়া বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই সেগুলো পেয়েছেন। ২১ মে দরপত্র আহ্বানের পর থেকে সমঝোতার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন তারা। যদিও দলের নেতারা সমঝোতার বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ। হাটের জন্য দরপত্র বিক্রির তিন ভাগের এক ভাগ জমা পড়ে।
একইভাবে সদর উপজেলার ১০টি অস্থায়ী হাটও ইজারা দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে ইজারা মূল্যের কোনো ভারসাম্য দেখা যায়নি এসব দরপত্রে। এতে সমঝোতার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তেমুখী পশুর হাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা মাসুক মিয়া জানান, তাঁর ডাক ছিল ৫০ হাজার টাকা। শাহপরাণ বাজারসংলগ্ন হাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতার ডাক ৭০ হাজার। ৮০ হাজারে হাট নিয়েছেন স্থানীয় গৌছ উদ্দিন। এদিকে ইজারায় অংশ নেওয়া ও তাদের নেপথ্যে থাকা নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে তারা ইজারা নিচ্ছেন।
মহানগরীতে একটি মাত্র স্থায়ী পশুর হাট কাজীর বাজার ছাড়া প্রত্যেক বছর সিটি করপোরেশন ৬ থেকে ১২টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দিয়ে আসছে। এবার ছয়টি হাটের মধ্যে নগরীর মাছিমপুরের কয়েদির মাঠ পশুর হাট সর্বোচ্চ ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দরদাতা হন সাবেক কাউন্সিলর ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমদের ছেলে ফেরদৌস আহমদ বাবলু। সেখানে বিএনপি নেতারা সমঝতার চেষ্টা করেও পারেননি।
তেমুখী এলাকার পশুর হাটের জন্য ৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র দুটি। সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা দরদাতা হন ছাত্রদল কর্মী খালেদুর রহমান। মূলত এ হাটের নেপথ্যে রয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমনসহ ৮-১০ নেতাকর্মী। মেজরটিলা বাজারসংলগ্ন হাটের সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকায় দরদাতা হন মাহি উদ্দিন নামের এক যুবদল কর্মী। এর মধ্যে দুটিই ত্রুটিযুক্ত। টিলাগড় পয়েন্ট-সংলগ্ন আলোচিত পশুর হাট ১ লাখ ৫ হাজার টাকায় দরদাতা হন বিএনপির তছরিম উদ্দিন। এ হাটের নেপথ্যে স্থানীয় সাবেক বিএনপি নেতা ছাড়াও রয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহাত চৌধুরী মুন্নাসহ কয়েকজন। গত বছর এ হাট ইজারা যায় ১ লাখ টাকায়।
নিলাম বিষয়ে সিসিকের সচিব আশিক নুর জানিয়েছেন, নিলাম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সর্বোচ্চ দরদাতা যারা হয়েছেন গতবারের বিষয়টি তুলনা করে ইজারা প্রদান করা হবে। স্বাক্ষর না হওয়ায় হাট এখনও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
সিসিক এলাকা ছাড়া সদর উপজেলার আরও ১০টি হাটের নিলাম সম্পন্ন করা হয়েছে। সদরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত পশুর হাট লাক্কাতুরা চা বাগান হাটের নেপথ্যে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম।
সাবেক ছাত্রদল নেতা আলতাফ হোসেন সুমন জানান, হাটের সঙ্গে অনেকে রয়েছেন। সবাই মিলেমিশে নিয়েছেন। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী জানান, বিষয়টি দলীয় প্রভাবের কিছু নয়। সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়ে কেউ ব্যবসা করলে বদনামের বিষয় নয়।সুত্র-সমকাল