অন্তহীন অপেক্ষার ১৩ বছর, কবে ফিরবেন ইলিয়াস?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১:২৮ পূর্বাহ্ণ
জুবেল আহমদ:
মধ্যরাত। দুই নম্বর রোড, সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের সামনে, বনানী, ঢাকা। সময়টা ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল। সড়কে পড়ে আছে একটি প্রাইভেটকার। নেই চালক, নেই যাত্রী। বিষয়টি ‘ব্রেকিং নিউজে’ স্থান পেতে সময় লাগলো না মোটেও। প্রাইভেটকারটি যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এম. ইলিয়াস আলীর! নিজের ওই প্রাইভেটকারযোগেই বাসাতেই ফিরছিলেন ইলিয়াস আলী। পথিমধ্যে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান তিনি। একই ভাগ্য মেনে নিতে হয় তার গাড়িচালক আনসার আলীকেও। তারপর সময় শুধু টিক টিক করে এগিয়েই গেছে। যেতে যেতে পেরিয়ে গেছে ১৩ টি বছর। আজ বৃহস্পতিবার, আরেকটি ১৭ এপ্রিল। এ দিনেই ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজের’ পুরো ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ইলিয়াস আলী কোথায় ‘হারালেন’? গাড়িচালক আনসার আলী বা কোথায়? তারা কি বেঁচে আছেন? এরকম অনেক প্রশ্নই শুধু আছে, উত্তর নেই কোথাও! ইলিয়াসকে ‘খোঁজে পেতে’ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতাও এখন আর দৃশ্যমান নয়।
এদিকে বাবার ছবিখানাই তাদের মূল সম্পদ। এ ছবি দেখলেই তাদের বুকের ভেতরটায় রক্তক্ষরণ হতে থাকে। চোখ ভিজে যায়, অশান্ত হয় মন। সবকিছু থেকেও আজ নিঃস্ব তারা। নিখোঁজ সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর তিন সন্তান আবরার, লাবিব ও সাইয়ারা নাওয়াল। সন্তানরা জানে না ছবির বাবাটি একদিন নড়েচড়ে বসবে কিনা। এদিকে স্বামীকে সেবার সুযোগ চিরতরে হারিয়েছেন কি না তাও জানেন না স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা। তেমনি মা সূর্যবান বিবিও জানেন না ইলিয়াসের মুখে মা ডাক আর শুনবেন কিনা। সন্তানের ফিরে আসার অপেক্ষায় আজো পথ চেয়ে বসে থাকেন মা সূর্যবান বিবি। ঠিক তেমনি অন্তহীন অপেক্ষায় আছেন নেতাকর্মীরা। তারা এখনো ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে আশায় বুক বেঁধে আছেন। তাদের দাবি ইলিয়াস আলী ফিরবেন। কিন্তু কবে ‘ফিরবেন’? এই প্রশ্নে এখন আর খুব আশাবাদী প্রতি উত্তর ভেসে আসে না বিএনপি নেতাকর্মীদের কণ্ঠ থেকে। তবে দলটির অগুনতি নেতাকর্মী এখনও বিশ্বাসে অটল, তাদের ইলিয়াস ‘ফিরে আসবেন’।
বৃহত্তর সিলেটের প্রখ্যাত রাজনীতিক আবদুস সামাদ আজাদ, সাইফুর রহমান, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, এস এম কিবরিয়াদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবেই দেখা হচ্ছিল ইলিয়াস আলীকে। তিনিও চলছিলেন সে পথে দুর্বার গতিতে। বৃহত্তর সিলেটের গণ্ডি পেরিয়ে ক্রমেই জাতীয় রাজনীতিতে এক জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু সব থমকে যায় ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল। মধ্যরাতে রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজ হন এম. ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনছার আলী। নিখোঁজের ১৩ বছর হয়ে গেল, এখনো অজানা রয়ে গেছে তার নিখোঁজের রহস্য। দীর্ঘ একযুগ ধরে তার সন্ধান চেয়ে বিএনপি দেশ-বিদেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎসহ নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন এই আশায় ছিলেন পরিবার ও দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু সেটাও হলো না। তবে গত ১৩ বছরে ইলিয়াস আলীকে নিয়ে র্যাবের সাবেক কর্মকর্তার ভিডিওসহ নানা গুঞ্জন উঠলেও এসব আমলে নেয়নি পরিবার ও দলের নেতাকর্মীরা। বর্তমান অন্তবর্তিকালীন সরকারের মাধ্যমে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনসহ অক্ষত অবস্থায় ফেরত চান নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পরিবার সহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিছবাহ বলেন, আমাদের নেতা এম ইলিয়াস আলী অবশ্যই ফিরে আসবেন, এই আশায় আমরা নেতাকর্মীরা অপেক্ষায় আছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের নেতাকে গুম করেছিল। আমাদের আশা এবং প্রত্যাশা ছিল হাসিনা পালিয়ে যাবার পর পরই আমাদের নেতাকে বর্তমান অন্তবর্তিকালিন সরকার খোঁজে বের করে আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিয়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে। কিন্তু এই সরকারের ৯ মাস অতিবাহিত হলেও এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত পাওয়া ও গুমের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। সরকারের নিকট আমাদের দাবি অচিরেই ইলিয়াস আলী সুস্থ অবস্থায় ফিরে পাবার ব্যবস্থা ও গুমের রহস্য উদঘাটন করে এর সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর বর্তমান অর্ন্তবর্তিকালীন সরকারের গুম কমিশনে আমরা এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের নিকট থেকে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানতে পারিনি বা পাইনি। এ ব্যাপারে সরকারের নিকট বার বার আমরা দাবী জানিয়ে আসছি যে এ বিষয়ে তদন্তে অগ্রগতি কি হলো।