বাংলাদেশের কাঁধে আছিয়ার শেষযাত্রা : জানাজায় মানুষের ঢল, ধর্ষকদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মার্চ ২০২৫, ৯:৫৮ অপরাহ্ণ
“আছিয়া রে! ও আমার বোনরে! তুই কেন চলে গেলি!” বিলাপ করে এমন সব কথা বলছে আছিয়ার ছোট্ট বোন; আহাজারি করছে স্বজনরা। কাঁদছে প্রতিবেশীরাও। চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না কেউ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শোকাহত মানুষ জড়ো হয়েছে মাগুরায়। তারা আছিয়ার শেষযাত্রায় সমবেত হয়েছে। তাদের সম্মিলিত কাঁধে চড়ে বাংলাদেশের হৃদয় ছিড়ে কফিনবন্দি হয়ে চিরবিদায় নিয়েছে আছিয়া। সবুজ বাংলার লাল হৃদয়ে আরেকটি রক্তাক্ত দাগ এঁকে দিয়ে চলে গেছে মেয়েটি।
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত শিশু আছিয়ার জানাজা হয়েছে শহরের নোমানী ময়দানে। আছিয়ার মরদেহ ঢাকা থেকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে বিকাল সাড়ে ৫টার পর মাগুরা স্টেডিয়ামে পৌঁছায়। শহরের নোমানী ময়দানে সন্ধ্যা ৭টায় শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। জানাজা পরিচালনা করেন মাগুরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি হাবিবুর রহমান। জানাজা শেষে আছিয়ার লাশ দাফনের জন্য তার নিজ বাড়ি শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে নেয়া হয়।
এ সময় বিচার চেয়ে শহরে বিক্ষোভ করেন ছাত্র জনতা। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ভায়না এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে।
শিশু আছিয়ার মৃত্যুর খবর নিজ বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে পৌছালে সেখানে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার স্বজনরা। বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসেন আছিয়াদের বাড়িতে। পুরো এলাকায় হয়ে পড়ে শোকাচ্ছন্ন।
স্থানীয় বাসিন্দা হামিদুর রহমান বলেন, আজ আছিয়া আমাদের মাঝ থেকে চলে গেল। তাকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না। আমরা চাই ধর্ষকের ফাঁসি। আজ একজন মা হারাল তার সন্তানকে। সন্তান হারানো বেদনা খুবই কষ্টের। আমরা শোক সন্তত পরিবারের সাথে আছি।
এদিকে, শিশু আছিয়ার মৃত্যুর খবরে অভিযুক্ত ধর্ষকদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে স্থানীয়রা প্রথমে পৌর এলাকার ওই বাড়িটিতে ভাঙচুর চালায়। তারপর বাড়িতে আগুন দেয়। কাউকে সেখানে আগুন নেভাতে দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানায়, জানাজার নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই আসামিদের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয় লোকজন। এর আগে আজ দুপুর ১টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকায় মারা গেছে শিশুটি। আইএসপিআর শিশুটির চিকিৎসাব্যবস্থা বিষয়ে জানিয়েছে, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি। গত ৮ই মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।