চার মন্ত্রী-এমপির পকেটে প্রবাসীদের কষ্টের ২৪ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯:৫২ অপরাহ্ণ
মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে দেড় বছরে ঠকানো হয়েছে অন্তত সাড়ে চার লাখ প্রবাসীকে। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপির সিন্ডিকেট দেড় বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগ পেয়েছে দুদক। বিপরীতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেই মালয়েশিয়ায় গিয়ে পাচ্ছেন না কাজ, কেউ আবার দেশ থেকে ঋণ করে গিয়ে ফিরে আসছেন খালি হাতে। যেখানে সরকার নির্ধারিত খরচ ছিল ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা, সেখানে একেকজন প্রবাসীকে এই সিন্ডিকেট চক্রকে দিতে হয়েছে ৫ লাখ টাকারও বেশি। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নাম করে মাত্র দেড় বছরে এই চক্র প্রায় সাড়ে চার লাখ প্রবাসীকে ঠকিয়ে মালিক হয়েছেন বিপুল অর্থের।
সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ আরও তিনজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। চাঞ্চল্যকর এমন অভিযোগ নিয়ে দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এরইমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদকের তথ্যানুযায়ী, সিন্ডিকেটে থাকা দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের নামে, অন্যটি মেয়ে নাফিসা কামালের নামে।
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড নামে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন। এরপর সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১০০ কর্মী বিদেশে পাঠায় স্নিগ্ধা। কিন্তু মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট বা চক্রে যোগ দেওয়ার পর দেড় বছরে প্রায় ৮ হাজার কর্মী গেছেন নিজাম হাজারীর এজেন্সির নামে। ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামে রিক্রুটিং এজেন্সি করেন।
মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে এই ফাইভ এম। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠালেও মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে ৮ হাজার ৫৯২ কর্মী। ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর দিক থেকে পঞ্চম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। দুদকের তথ্যে দেখা যায়, মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালুর আগে তাদের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। বিদেশে পাঠিয়েছিল মাত্র ২৩৮ কর্মী। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে তারা শীর্ষ তালিকায় চলে যায়।
প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মালয়েশিয়া গেছেন ৭ হাজার ৮৪৯ কর্মী। চক্র গঠনের সময় বেনজীর ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি।অভিযোগে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য সরকার নির্ধারিত খরচ যেখানে ছিল ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা, সেখানে একেকজন কর্মীকে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়েছে। দেড় বছরে সাড়ে চার লাখের মতো কর্মী পাঠিয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে এখাতে।
এই সিন্ডিকেটের কারণে সরকারের নির্ধারিত ফির চেয়ে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি কমিশন নিয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠায় বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে গত ১৯ এপ্রিল জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় বিবৃতি দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মালয়েশিয়ার অনেক বাংলাদেশী কর্মীঅমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। কর্মীদের চাকরির জাল প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার সরকারের প্রবীণ কর্মকর্তারাও এই চক্রের সাথে জড়িত। যা কোনওভাবেই গ্রহণ করা যায় না।