বন্যার ছুবলে ক্ষত বিক্ষত ওসমানীনগর: সংবর্ধনা ও ভুরিভোজে ব্যস্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৪, ৩:০৮ অপরাহ্ণ
ওসমানীনগর প্রতিনিধিঃ
ওসমানীনগরে যখন চারদিকে বন্যার অথৈ জল। চরম দুর্ভোগে দিন-রাত পার করছেন উপজেলার সোয়া দুই লাখ বন্যা কবলিত মানুষ ঠিক সেই মুহুর্তে উপজেলা হাসপাতালে কর্মকর্তা বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা এবং ভুরিভোজ নিয়ে ব্যস্ত দিন পার করলেন ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
জানা গেছে, ঈদের আগ থেকে বন্যা কবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন ওসমানীনগরের সোয়া দুই লাখ মানুষ। বাড়ি ঘরে পানি থাকায় অসংখ্য পরিবার আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে। ত্রাণ অপ্রতুলতার কারণে খাদ্য সকটে রয়েছেন বন্যা কবিলতরা। সমাজের সকল স্তরের মানুষ বন্যা কবলিত মানুষের পাশে থেকে শুকনা খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করে যাচ্ছেন। ঠিক সেই মুহুর্তে গত বুধবার নবাগত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বরণ, দুই জন ডাক্তারের বিদায়, একজন স্বাস্থ্য পরিবদর্শক ও একজন স্বাস্থ্য সহকারির বিদায় উপলক্ষে জাকঝমকপূর্ণভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদায় সংবর্ধনা ও ভুরিভোজের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে হাসপাতাল ও মাঠ পর্যায়ের প্রায় দেড়’শ কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন সিলেট বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হয়ে আসেন সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নুরে আলম শামীম, সিলেট সদরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাহিল, বিশ্বানাথের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন সুমনসহ অনেকে।
দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে সিলেট থেকে বাবুর্চী এনে চলে খাবারের আয়োজন। প্রায় দেড় শ জনের খাবারের জন্য রান্না করা হয় মোরগ ভোনা, রুই মাছ ভাজা, চিংড়ি ভোনা, আলু ও বেগুন ভর্তা, মুরিগণ্ট, ডাল। সাথে ছিল দই ও সফট ড্রিঙ্ক। খাবারের জন্য মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের তৃতীয় তলার দুটি কক্ষে ডেকোরেটার্স থেকে চেয়ার টেবিল এনে সাজানো হয়। বেলুন দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠান কক্ষের মূল ফটক। সব মিলিয়ে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে আয়োজনটি করা হয়।
বিষয়টি ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পেলে অনেকেই এই আয়োজনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
শিব্বির আহমদ নামের একজন লিখেন, ‘১১ পদের খাবার থেকে যদি ৫ পদের খাবার বন্যা কবলিত মানুষের কাছে বিতরণ করা হতো তাহলে ভালো হতো। যারা বন্যা কবলিত আছেন একমাত্র তারাই বলতে পারবেন কতটা কষ্টে আছেন। এই ছবিগুলো দেখে বড় কষ্ট লাগের ভাই’।
জয়ন্ত নামের একজন লিখেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনন্দ করে। পানির জন্য উপজেলার সাধারণ মানুষ কষ্ট করে’।
সাংবাদিক উজ্জ্বল দাশ লিখেন, ‘উনাদের মানবতা নির্বাসনে, তাইতো এমন আয়োজন’।
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাইনুল আহসান বলেন, গত বুধবার আমাদের সমন্বয় সভা ছিল। ওই অনুষ্ঠান শেষে অবসর জনিত কারণে দুইজন এবং বদলিজনিত কারণে দুইজন ডাক্তারকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুষ্ঠানের সকলের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। বন্যার্তদের জন্য প্রতিদিন মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।