ওসমানীনগরে কিশোরী ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত রঞ্জুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬:৫০ অপরাহ্ণ
ওসমানীনগর প্রতিনিধিঃ
সিলেটের ওসমানীনগরে ১৭ বছরের কিশোরী ধর্ষণের পর অনৈতিক সুবিধা দিয়ে গর্ভপাতে চাপ প্রয়োগ করায় অভিযুক্ত রঞ্জু দেবকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এর আগে গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় থানা পুলিশ।
রঞ্জু দেব (৪৫) উপজেলার নিজ বুরঙ্গা গ্রামের রাখাল দেবের ছেলে ও ধর্ষক সজু দেবের বড় ভাই। মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। যদিও রঞ্জুদেবসহ তিন জনকে আসামী করে গত ১১ জুলাই সিলেট আদালতে একটি মামলা দায়ের আবেদন করলে মামালাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবি আই) কে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন অদালত। ওই মামলায় উপজেলার নিজ বুরুঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য শিবু দেব, রঞ্জু দেব ও একই এলাকার কথিত ডাক্তার বাসু দাসকে আসামী করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রঞ্জু দেবকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদল আমিন।
অন্যদিকে, একই মামলার আরেক অভিযুক্ত ইউপি সদস্য দিপংকর দেব শিবুকে সোমবার একাধিকবার থানা কম্পাউন্ডের ভিতরে ও বাইরে দেখা গেছে। ওইদিন বিভিন্ন সময় পুলিশ সদস্যদের সাথে চায়ের টেবিলে আড্ডায়ও ছিলেন তিনি। অন্য অভিযুক্ত বাসু দাস দিয়েছেন গা ডাকা। এদিকে, অভিযুক্ত রঞ্জুদেবকে ছেড়ে দেয়ায় উপজেলা জোড়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা -সামলোচনা।
পৃথক মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২০ অক্টোবর পূজার ফুল তুলতে গিয়ে রঞ্জু দেবের ছোট ভাই সজু কর্তৃক ধর্ষিত হয় কিশোরী। পরে একাধিকবার শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে এক পর্যায়ে কিশোরী শারীরিক পরিবর্তন ঘটলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরবর্তীতে ওসমানীনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২ মে ধর্ষিতার পিতা সজু দেবকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর সজুর বড় ভাই রঞ্জু দেব, ইউপি সদস্য দিপংকর দেব শিবু, স্থানীয় কথিত ডাক্তার বাসু দাস ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিশোরীকে গর্ভপাতের প্রস্থাব দিলে কিশোরীর পরিবার তা প্রত্যখান করে।
পরবর্তীতে ৪ জুলাই দুপুরে রঞ্জু দেব ও শিবু দেব কিশোরীর বাড়ীতে এসে ৫ জুলাই সন্ধ্যা পবিত্র হিন্দু ধর্মের বিবাহ রীতি মোতাবেক শিবু দেবের সিটিং রুমে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিবাহের মঙ্গলাচরন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার আশ্বাস দেন। নির্ধারিত সময়ে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হলে কিশোরীসহ তাদেরকে সেখানে আটকে রাখা হয়। এসময় কথিত ডাক্তার বাসু এমএম কিট নামক ২ বক্স ট্যাবলেট ওই কিশোরীর হাতে দিয়ে এবং শিবু পানি দিয়ে ঔষধ সেবনের জন্য জোর-জবরদস্তি করলে কিশোরী রাজি না হওয়ায় তাকে বর্বর শারিরিক নির্যাতন করা হয়। ঔষধ সেবনে করাতে ব্যর্থ হয়ে একটি সাদা কাগজে জোরপূর্বক কিশোরীর টিপসই রাখে অভিযুক্তরা।
পরবর্তীতে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বালাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে এই ঘটনায় গত ১১ জুলাই সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি ১ নং আদালতে ইউপি সদস্য দিপংকর দেব শিবু, রঞ্জু দেব ও বাসু দাসকে আসামী করে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী কিশোরী।
মামলা দায়েরের আগে, এই বিষয়ে পঞ্চায়েতের লোকজন সালিশে বসলে নির্ধারতি দিনে ইউপি সদস্যসহ সজুর পরিবারের কেউ উপস্থিত হননি। কিশোরীর পিতা বাদি হয়ে থানায় মামরা দায়েরর চার দিন পর রাতে মামলার বাদীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে কথিত ডাক্তার বাসু দাশের চেম্বারে আটকে রাখা হয়। বাসু দাশসহ অভিযুক্ত সজুর ভাই রঞ্জু দেব, দিপংকর দেব ৫ লক্ষ টাকা গ্রহণের মাধ্যমে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও কিশোরীর গর্ভপাত করাতে চাপ সৃষ্টি করেন। পরে এই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন মামলার বাদী ও নির্যাতিতার পিতা। এসব ঘটনার মধ্যে গত ২৩ জুলাই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ছেলে সস্তানের জন্ম দেন ওই কিশোরী।
হাসপাতাল থেকে ফিরে কিছুদিন বাবার বাড়িতে থাকলেও সম্প্রতি স্ত্রী ও সস্তানের স্বীকৃতির দাবিতে অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে উঠেন কিশোরী। গত ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯ টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত ওই বাড়িতে অবস্থান নিলেও ঘরের কেউ দরজা না খোলায় আত্মহত্যার হুমকি কিশোরী। খবর পেয়ে থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তের পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলতে না পেরে ওই কিশোরীকে গভীর রাতে শিশুসহ ফের বাবার বাড়িতে পৌছে দেয়।
সরজমিনে নির্যাতিতার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়- শিশু সন্তান নিয়ে একটি ঘরে বসে আছেন তিনি। তবে এতদিন পর্যন্ত অভিযুক্ত সজু গ্রেফতার না হওয়ায় অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি। সামাজিকভাবে হেয়- প্রতিপন্ন ও নিরাপত্তহীনতায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।