চমক দেখালেন মেয়র আরিফ
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:১২ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে নানা সময় নানা সমালোচনা ছিল মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ঘিরে। মন্ত্রী পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক, দলের প্রয়োজনে অ্যাক্টিভ না হওয়া, নিজেকে দূরে দূরে রাখা সহ নানা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। নিজেকে বাঁচাতে কৌশলী হওয়ার জল্পনাও আছে তার। কিন্তু সব সমালোচনা ছাপিয়ে সিলেটে চমক দেখালেন আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সিলেটে এনে ব্যতিক্রমী আয়োজন করে দলের ভেতরে বাহ্বা কুড়াচ্ছেন তিনি। এতে তার অবস্থান হয়েছে আরও সুসংহত। এছাড়া- এবারের আয়োজনকে ঘিরে সিলেটের বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের নজরও কেড়েছেন তিনি। গোটা নগরীর বিলবোর্ডেও ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিও।
হঠাৎ করে কোনো বাধা ছাড়াই আরিফের এই জমকালো আয়োজন নিয়ে এখন আলোচনা চলছে সিলেটে। সিলেট সিটি করপোরেশনের বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্যও।
এই মুহূর্তে সিলেট বিএনপি’র সার্বিক কর্মকাণ্ড দেখছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তার হাত ধরেই সিলেট বিএনপিকে পুনর্গঠনের কাজ চলছে। ফলে আরিফুল হক চৌধুরী দলের এই সাজানো প্রক্রিয়ায় ততোটা ‘এক্টিভ’ নয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতা ও মেয়র হওয়ার কারণে তার কাছেই ছুটে যান বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। গত দুই সপ্তাহ আগে সিলেট বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশে আরিফ ছিলেন সাইডলাইনে। আয়োজনে তিনি সদলবলে অংশ নিলেও ওই সমাবেশের কর্তৃত্ব ছিল চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের হাতে। এই সমাবেশে শোডাউন দিয়ে উপস্থিত হয়ে আরিফ তার শক্তির জানান দিয়েছেন।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- সমাবেশে আরিফের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপি’র গঠিত স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সিলেট বিভাগীয় আহ্বায়ক। তার সঙ্গে সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। এ কারণে সিদ্ধান্ত নিয়ে আরিফ ও ডা. জীবন সিলেটে সুবর্ণ জয়ন্তীর আয়োজন করেন। এই আয়োজনটি ছিল স্বাধীনতাকে ঘিরে। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মতে- সিলেট মুক্ত হওয়ার পেছনে তখনকার জেডফোর্স প্রধান জিয়াউর রহমানের অবদান রয়েছে। বিষয়টি জানাতেই সিলেটের মানুষের জন্য বিএনপি’র তরফ থেকে এই আয়োজন করা হয়। আর সিলেট মুক্ত হওয়ার এই গল্প শুনিয়েছেন তৎকালীন সময়ে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে থাকা ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। এতে আরিফুল হক চৌধুরীর আহ্বানে সিলেটে এসেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও।
আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট বিএনপি’র এই আয়োজন শুরুতেই বাধার মুখে পড়েছিল। কয়েকজন ছাত্রদল নেতা স্লোগান দেওয়া ও চেয়ারে বসা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছিল। তারা দাবি করেন- এই অনুষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দলের অভ্যন্তর থেকে কারো কারো ইন্ধনে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল। শেষে অবশ্য সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অনুষ্ঠানের পর বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তবে- সংঘর্ষের পরও সফলভাবে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ায় খুশি হয়েছেন সবাই। বিএনপি’র সিনিয়র নেতারাও আরিফের এই আয়োজন নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। এ ধরনের আয়োজনে ভবিষ্যতে বিএনপি’র তরফ থেকে গোটা দেশে আয়োজন করা হবে।
আরিফের এই অনুষ্ঠান তাদের জন্য অনুপ্রেরণার বলেও সিলেট ছাড়ার আগে বলে গেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে- সিলেটের অনুষ্ঠানে এসে এবার প্রয়াত দুই নেতার বাসায় গিয়েছেন মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে আসা বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা। দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে অনুষ্ঠানের পর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় গিয়ে কিছু সময় বিশ্রাম নেন বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা। এরপর তারা সিলেটের শাহ্পরাণ (রহ:) মাজার জিয়ারত করেন। এরপর তারা নগরীর যতরপুরে প্রয়াত নেতা এমএ হকের বাসায় যান। সেখানে এমএ হকের স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে তারা কথা বলেন। পরে তারা নগরীর লামাবাজারস্থ প্রয়াত নেতা ও সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের বাসায় যান। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দু’জন স্মরণ করে বলেন- সিলেটের এমএ হক ও দিলদার হোসেন সেলিমের শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। তারা দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মী ছিলেন।
আরিফের উদ্যোগে নগরীতে বিলবোর্ড: স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন কমিটি সিলেট বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে নগরীর ভিআইপি রোডের কয়েকটি এলাকায় বড় বড় বিলবোর্ড স্থাপন করেছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আলাদা আলাদা বিলবোর্ডে ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ছবিও। যেসব বিলবোর্ডে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ছিল সেগুলোতে তার মুক্তির দাবি জানানো হয়। আর তারেক রহমানের ছবি সংবলিত বিলবোর্ডে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়। সিলেট বিএনপি’র কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন- গত এক দশকে সিলেটের কোথাও এ ধরনের বিলবোর্ড কেউ স্থাপন করেনি। সর্বশেষ ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে বিএনপি’র সমাবেশের আগে এমন বিলবোর্ড সাটানো হয়েছিল। আর এবার মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সাটানো হয়েছে।