নিজেদের পরিকল্পনায় এখনও করোনামুক্ত ৪০ হাজার খাসিয়া ও গারো জনগোষ্ঠী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৩:৫৪ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারের সুবজে ঘেরা বিশাল পাহাড়ী এলাকায় বসবাস করে নৃতাত্তিক গোষ্ঠী খাসিয়া এবং গারো সম্প্রদায়। করোনা মোকাবিলায় স্বাধ্যবিধি শতভাগ মেনে চলা এবং নিজেদের নিরাপদ রাখতে নিজস্ব কৌশল প্রয়োগ করে শতভাগ নিরাপদ রয়েছেন মৌলভীবাজার জেলার ৬৫ পুঞ্জিসহ সিলেট বিভাগের ৯০টি পুঞ্জির বাসিন্দা।
পাহাড়ে পানচাষ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের গ্রামগুলোকে পুঞ্জি বলা হয়। আধুনিক সুযোগ সুবিধার বাইরে পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করলেও তাদের মধ্যে সচেতনতার হার সমতলের সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের এ ব্যাপক সচেতনার প্রমাণ গেলো বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা সংক্রমণকালে। করোনা প্রতিরোধে স্বাধ্যবিধি মেনে চলা এবং নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে নিজস্ব কৌশল প্রয়োগ করে শতভাগ নিরাপদে আছেন জেলার ৬৫টি পান পুঞ্জির জনগোষ্ঠী ।
বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও মাগুরছড়া পুঞ্জির প্রধান (মন্ত্রী) জিডিশন প্রধান শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) জানান, আমাদের কারো যেমন করোনা হয়নি তেমনি কাউকে করানোর টেস্ট করার প্রয়োজন এখনও পরেনি। যদি কারো লক্ষণ দেখা যায় সাথে সাথে টেস্ট করতে বলেছি আমরা। স্বাস্থ্যবিধিসহ সব নির্দেশনা মানার ফলে এখনও আমরা করোনামুক্ত থাকতে পেরেছি।
খাসিয়া সোশাল কাউন্সিলের তথ্যমতে, মৌলভীবাজারের ৬৫টিসহ সিলেট বিভাগে ৯০টি পুঞ্জি রয়েছে। এসব পুঞ্জিতে বসবাস করেন প্রায় ৪০ হাজার নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির জনগণ। তাদের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় বসবাস করছেন ৩০ হাজার। করোনা প্রকপ শুরুর সাথে সাথে তারা নিজ উদ্যোগে লকডাউনে চলে যান। পুঞ্জির বাইরের মানুষ পুঞ্জির ভেতরে প্রবেশ এবং ভেতর থেকে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। সবার জন্য মাস্ক এবং স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রতিটা পুঞ্জির বাইরে নির্দিষ্ট জায়গা এবং সময় ঠিক করে দেয়া হয় পান বিক্রির জন্য। এতে যারা অংশ নেবেন তাদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যাবহার নিশ্চিত করা হয়। পান বিক্রি শেষে পুঞ্জির ভেতরে প্রবেশ করার সময় সবকিছু স্যানিটাইজ করে গোসল নিশ্চিত করা হয়। এমনকি বাইরে থেকে আসা পানের পাইকারদের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিক্রি করা হয়। পানের ক্রেতারা পুঞ্জির স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা মেনে চলেছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পান বিক্রি করা হবে না এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রতিটি পুঞ্জিতে। প্রতিটি পুঞ্জিতে একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সবার নিত্য প্রয়োজনী বাজার করে দেয়া জন্য।
লাউয়াছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী ও সিলেট আদিবাসী ফোরামের সদস্য সচিব ফিলা পতমী জানান, পুঞ্জিতে প্রবেশে ও বাইরে বেরোনোর ক্ষেত্রে যখন আমরা কড়াকড়ি করি তখন অনেকের কাছে তা বাড়াবাড়ি মনে হয়েছিল। কাজ করেছিলাম বলেই এখন ফল পেয়েছি।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন তৌউহীদ আহমদ জানান, মৌলভীবাজার জেলায় খাসিয়া পুঞ্জির কোনো সদস্য এখনও করোনা আক্রান্ত হননি।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠির কার্যক্রমে প্রমাণীত হয়েছে সচেতন হলে সবাই সুরক্ষিত থাকবে আর অন্যকে নিরাপদ রাখতে পারে। তারা সবার জন্য অনুকরণীয়।