প্রতিবন্ধী, বিধবা, মৃতদের ভাতার টাকা ইউপি সদস্যের পকেটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ আগস্ট ২০২০, ১১:৫৫ অপরাহ্ণ
ফখরুল ইসলাম:
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, বিধবাদের ভাতার টাকায় নিয়মিত ভাগ বসানোর অভিযোগ রয়েছে ইউপি সদস্য সুমন আহমদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ভাতার টাকাও জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
তার বিরুদ্ধে এক বিধবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আরেকজন প্রতিবন্ধী বাদী হয়ে থানায় মামলাও করেছেন।
অভিযুক্ত সুমন আহমদ জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। সুমন নিজেকে সিলেট মহানগর যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় দাপট খাটান বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
মামলার এজাহার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, অসহায়দের ভাতার কার্ড আটকে জনপ্রতি দুই হাজার টাকা করে চাঁদা নিয়েছেন ইউপি সদস্য সুমন আহমদ। বারহাল ইউনিয়নের নুরনগর গ্রামের ছনাইরাম দাস, মুহিদপুর গ্রামের আবদুল মান্নান, ফরিজ আলী, মুজম্মিল আলীসহ বেশ কয়েকজন ভাতাভোগী ব্যক্তি গত ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মারা যান। কিন্তু মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নামে ২০১৯ সালে অগ্রণী ব্যাংক জকিগঞ্জের শাহগলী শাখা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স্ক ভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন সুমন।
এ ঘটনায় এলাকার লোকজন সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দেন।
এ ছাড়া মঙ্গলবার বাক্প্রতিবন্ধী তাজ উদ্দিন বাদী হয়ে সুমন আহমদের বিরুদ্ধে জকিগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। আর বৃহস্পতিবার বিধবা কামরুন নেছা তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বারহাল ইউনিয়নের মুহিদপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী লালই বিবি অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, বয়স্ক ভাতার কার্ড দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সুমন মেম্বার তার লোকজনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে আমার কাছ থেকে দুই দফায় সাত শ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এখনো কার্ড পাইনি।
বিধবা আয়ারুন নেছা বলেন, মেম্বারকে ২ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখনো ভাতার কার্ড পাইনি। শিল্পী বেগম নামের আরেক নারী জানান, তার প্রতিবন্ধী মেয়েকে ভাতার কার্ড দেওয়ার সময় সুমন মেম্বার টাকা নিয়েছেন। এখন আরো ৩ হাজার টাকা দাবি করছেন। তিনি এক হাজার টাকা দিয়েছেন।
প্রতিবন্ধী শিশুর বাবা আবদুল মুতলিব জানান, তার ছেলের ভাতার কার্ডের জন্য ইউপি সদস্য সুমন ও তার সহযোগী (পিএস পরিচয়দানকারী) সাঈদ মিয়া ৩ হাজার টাকা চেয়েছেন। কিন্তু টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তার নেই। এ জন্য কার্ডও পাননি।
ভুক্তভোগীরা জানান, সুমন আহমদ নিজেকে সিলেট মহানগর যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় দাপট খাটান। তার ছত্রচ্ছায়ায় এলাকায় অনলাইনের মাধ্যমে তীর খেলা নামের জুয়ার আসরও বসে। এতে অনেকে সর্বস্ব হারাচ্ছে। কিন্তু সুমনের সাঙ্গপাঙ্গদের ভয়ে কেউ কিছু করতে পারে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন সময় সুমন মেম্বারের নামে চাঁদা তুলতেন বারহাল ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আবদুস সালাম। তিনি ভাতা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে গ্রাম পুলিশ আবদুস সালাম বলেন, ‘বিধবা নারীরা ব্যাংকে ভাতার টাকা উত্তোলন করতে গেলে সুমন মেম্বারের নির্দেশে তাদের কারও কাছ থেকে ২ হাজার, আবার কারও কাছ থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করেন। তারপর সব টাকা সুমন মেম্বারের কাছে জমা দেন’।
এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিনয় ভূষণ জানান, বারহাল ইউনিয়নের নুরনগর গ্রামের ছনাইরাম দাস, মুহিদপুর গ্রামের আবদুল মান্নান, ফরিজ আলী, মুজম্মিল আলীসহ মৃত ব্যক্তির নামে ভাতার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত করা হচ্ছে।
জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের জানান, প্রতিবন্ধী তাজ উদ্দিন ইউপি সদস্য সুমন আহমদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দিয়েছেন। তার এজাহারটি জিডি হিসাবে রেকর্ড করে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার ইউপি সদস্য সুমন আহমদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সুমন আহমদ বলেন, ‘আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এসব করা হচ্ছে। আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সিলেট মহানগর যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তাই যুবলীগ নেতা পরিচয় দিই। এটা তো অন্যায় নয়’। সূত্র- দেশ রুপান্তর।