অনলাইন ক্লাস ও আমাদের বাস্তবতা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মে ২০২০, ৩:৫৫ অপরাহ্ণ
মার্জান সাজ্জাদ:
অনেকেই বলছে আমি প্রযুক্তি সামগ্রীর ব্যবসা করি, অথচ আমি এখনো অনলাইন ক্লাস শুরু করলাম না। আজ অনলাইন ক্লাস ও আমাদের বাস্তবতা নিয়ে কিছু আলোচনা করবো।
আজ প্রায় দুই মাসের উপরে স্কুল কলেজ বন্ধ। সম্প্রতি কিছু প্রতিষ্টান ও শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস শুরুর উদ্যোগ নিয়েছেন, যদিও আমার মতে এইগুলো তেমন ফলপ্রসূ ও কার্যকরী হচ্ছে না। কারনগুলো একটু ভেবে দেখা দরকার-
১) কম্পিউটার/ ডিভাইসের অভাব-
আমাদের সব ছাত্রছাত্রীর কি কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট আছে? অনেকে বলবেন স্মার্টফোন তো আছে।কিন্তু এটাও ভুল ধারনা। স্মার্টফোনের ছোট স্কীনে ফেসবুক এপ্স দেখা যেতে পারে, কিন্তু একটা একাডেমি ক্লাসের ক্ষুদে লেখা দেখে ভালোভাবে ক্লাস করা সম্ভব না।
২) ইন্টারনেট কানেকশন –
দ্রুত গতির নেটওয়ার্ক কানেকশন ছাড়া ভালো মানের অনলাইন ক্লাস করানো বা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ জায়গাতেই ভালো মানের ইন্টারনেট সেবা নেই। ইন্টারনেট কানেকশনের মান ও বারবার বিদুৎ চলে যাওয়া পড়ার স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করবে।
৩) খরচ-
১ জিবি ডেটা দ্বারা যদি ২/৩ টা ক্লাস করা যায়, তবে বাংলাদেশের কতজন শিক্ষার্থী সেই খরচ নিয়মিত বহন করতে পারবে?সকল এলাকায় ও সবার বাসায় কি ব্রডব্যান্ড কানেকশন আছে? তাই বাংলাদেশের মতো একটি দেশে সবার জন্য অনলাইন ক্লাস এখনো একটি বিলাসিতা।
৪) অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ –
অনলাইনে ক্লাস নেওয়া আর শ্রেণীকক্ষে পড়ানোর মাঝে বিস্তর ফারাক আছে। একজন শিক্ষক তাঁর নিজ বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে পারেন কিন্তু অনলাইন ক্লাসের খুটিনাটি বিষয়গুলো তার কাছে একেবারে নতুন। কম্পিউটার, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যারের ব্যবহার সম্পর্কে অনেকের পূর্ব ধারণা নাও থাকতে পারে। এ রকম ক্লাস করানোর অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ না থাকলে, ক্লাসের মান নিশ্চিতভাবে খারাপ হবে।
৫) পরিবেশ-
পরিবার পরিজনদের সাথে থেকে ক্লাস করানো বা করার মতো পরিবেশ কি সকলের বাসায় আছে? বাসায় আলাদা নিরিবিলি পরিবেশে, পর্যাপ্ত আলো ও সুবিদাজনক ক্লাসরুমের পরিবেশ সৃষ্টি করা আসলেই অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য। তাছাড়া অনলাইনে ক্লাস করিয়ে সকল ছাত্রছাত্রী থেকে সম্মানী আদায়ের মতো পরিবেশ এখনো এখানে গড়ে উঠেনি।
এটি প্রযুক্তি বিরোধিতা নয়, সমস্যা আমাদের দারিদ্র্যতা ও বাস্তবতা। তাই চিন্তা ভাবনা না করে তাড়াহুড়ো করলে উপকারের বদলে সমস্যা হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা- ধনী গরীবের বৈষম্য।
মার্জান সাজ্জাদ।
শিক্ষক, ইংলিশ প্র্যাকটিস সেন্টার।