লকডাউন গ্রিস, বিপাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ৪:১৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। ইউরোপের মানুষও এই ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বন্ধ আছে। ফলে অর্থনৈতিক মন্দা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। ইউরোপের দেশ গ্রিসও এর ব্যতিক্রম নয়। গ্রিসে ইতোমধ্যে প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষ সংক্রামিত হয়েছেন এবং প্রায় শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন।
গ্রিসে এক মাসেরও বেশী সময় লক-ডাউন এর কারণে জনজীবনের স্বাভাবিক গতিশীলতা একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি শ্রমজীবী মানুষেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য গ্রিক সরকার পাঁচটি ধাপে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ইউরোর অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যেখানে কর্মজীবীদের জন্য এক মাসের বেতন প্রদান, আয়কর ও সামাজিক নিরাপত্তা কর মওকুফসহ বিভিন্ন সহায়তাও থাকছে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের সুতিকাগার ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত গ্রিসে প্রায় ৩৫ হাজার বাংলাদেশির বসবাস। তাদের বেশিরভাগই ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কৃষি, তৈরি পোশাক এবং পর্যটনের মত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিযুক্ত আছেন। করোনা ভাইরাসজনিত বিরূপ পরিস্থিতিতে এখানকার বাংলাদেশিরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। স্থানীয় গ্রিকদের মতো তারাও গ্রিক সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় রয়েছেন , ফলে তারা প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রেখেছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। প্রথমেই করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ এবং এর থেকে রক্ষা পাবার জন্য সচেতনামুলক তথ্য সমৃদ্ধ পোস্টার, লিফলেট প্রস্তুত করেছে যা গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপ ও মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কাছে প্রচার করা হয়েছে। পরবর্তীতে আইইডিসিআরের সহায়তায় একটি সচেতনতামূলক ভিডিওচিত্র প্রস্তুত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। প্রবাসীদের চলাচলের প্রয়োজনীয়তা সীমিত করতে দূতাবাস ডাকযোগে কনস্যুলার সেবা প্রদান শুরু করে। এছাড়া দূতাবাস প্রবাসী বিভিন্ন সংগঠনকে সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে উৎসাহিত করে আসছে।
প্রতিবছর বাংলাদেশিসহ বিপুল সংখ্যক অভিবাসী গ্রিসে প্রবেশ করেন যারা পরবর্তীতে গ্রিসে বৈধতা লাভ করেন কিংবা পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমান। সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসন বিষয়ে রক্ষনশীল গ্রিক সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি গ্রিসে বৈধতা অর্জন করতে পারেননি অথবা সীমান্ত অতিক্রম করে পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেতে পারেননি। অবৈধ অভিবাসী হওয়ার কারণে এইসব বাংলাদেশি কর্মহীন দিন কাটাচ্ছেন। অবৈধ হওয়ার কারণে তারা গ্রিক সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমেরও অন্তর্ভুক্ত নয়।
গ্রিসে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দশ সহস্রাধিক যারা মূলত এথেন্স, থেসালোনিকিতে, মানোলাদা, লাপ্পা এবং দ্বীপাঞ্চলে বসবাস করছেন। দীর্ঘ লকডাউনে বিপর্যস্থ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবাসী-বান্ধব নীতির আলোকে এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে এবং তাদের সহায়তার জন্য প্রাথমিকভাবে একটি থোক বরাদ্দের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এই সহায়তার আওতায় নিরুপায় বাংলাদেশিদের একমাসের মৌলিক খাদ্য সামগ্রী প্রদানের প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের সহায়তার জন্য দূতাবাসের বরাবরে ২০ লক্ষ টাকার একটি থোক বরাদ্দ প্রদান করে।