ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুর চত্বর থেকে সরে গেল চাঁদাবাজরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০১৯, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
শেরপুর চত্বরে দাঁড়ানো ছিল চাঁদাবাজরা। পশুবাহী ট্রাক এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে ট্রাকে। নিজেদের হাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য জবরদখল শুরু হয়। চায় চাঁদাও। মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয়দের নজরে পড়ে দৃশ্যটি। এতে ক্ষোভ বাড়ে এলাকায়। এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তারা। প্রতিবাদ করে।
আর তাদের প্রতিবাদের মুখে বিকালের আগেই চাঁদাবাজ ওই চক্রটি সরে আসে। শেরপুর টোলপ্লাজা এলাকার বাসিন্দারা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, শেরপুরে ওদের অবস্থান ছিল কয়েক দিন ধরে। পত্রিকায় রিপোর্ট আসার পর এলাকার মানুষ জানতে পারেন তারা অপকর্ম করছে। এরপরই তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ে। এখন শেরপুরে আর চক্রের অবস্থান নেই বলে জানান তারা। সিলেটের প্রধান পশুর হাট কাজিরবাজার পশুর হাট। এই হাটই হচ্ছে পশুবাহী ট্রাকের গন্তব্য। ট্রাকের সামনে ব্যানার টানিয়ে ব্যাপারীরা পশু নিয়ে আসছেন কাজিরবাজারে। কিন্তু নগরী ও আশপাশ এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ হাটের মালিকরা সিন্ডিকেট করে অবস্থান নিয়েছিলো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুর ও লালাবাজারে। ওখান থেকে তারা নিজেদের হাটে পশু নেয়ার জন্য জবরদস্তি শুরু করে। হাটে গরু না নিতে পারলে চাঁদা আদায় করে ছেড়ে দেয়। কয়েকজন ব্যাপারী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, এবার তারা নতুন নিয়মে পশু নিয়ে আসছেন হাটে। পশু বোঝাই ট্রাকের সামনে টানিয়ে দেয়া হচ্ছে ব্যানার। আর এ ব্যানারে লিখে দেয়া হয়েছে গন্তব্যস্থল কাজিরবাজার পশুর হাট। কিন্তু পথিমধ্যে অনেক ট্রাক থেকে ব্যানার ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে।
কাজিরবাজার পশুর হাটের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লোলন জানিয়েছেন, পথে পথে বাধা আছে। এরপরও গতকাল কাজিরবাজারে পশু বোঝাই ট্রাক এসে ঢুকেছে। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত পশু বোঝাই ট্রাক আসবে। ইতিমধ্যে তারা নিরাপদে পশু যাতে কাজিরবাজার হাটে আসতে পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। এদিকে সিলেটের হাটে পশু উঠতে শুরু করেছে। কাজিরবাজারে পশুর সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে সিলেটের লালদিঘীপাড় ও টিলাগড় পয়েন্টের হাটেও গরু উঠেছে। নগরীর ঝরনার পাড় এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, বাজারে এখনো দাম প্রচুর। গরুর সংখ্যা কম। এ কারণে বাইরে থেকে আসা ব্যাপারীরা দাম ছাড়ছেন না।
এদিকে কোরবানির পশুর হাটের ইজারাদার, ঈদ জামাত ও সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কে মঙ্গলবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মতবিনিময় সভা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বিপিএম’র সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, ডিসি কামরুল আমিন, ডিসি ফয়সল মাহমুদ, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), ডিসি তোফায়েল আহমেদ, ডিসি সোহেল রেজা পিপিএম, ডিসি সঞ্জয় সরকার প্রমুখ। সভায় সকলের মতামতের ভিত্তিতে পবিত্র ঈদুল আজহা ও কোরবানির পশুর হাট সংক্রান্তে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় পশুর হাটে জাল টাকা শনাক্তে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বুুথে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন দ্বারা টাকা পরীক্ষা, এক হাটের গরু জোর করে অন্য হাটে নেয়া যাবে না এবং পশুবাহী গাড়ি-ট্রাক পরিবহনে বাধা প্রদান করা যাবে না, গরুবাহী পশুবাহী গাড়ির সামনে ব্যানারে হাটের নাম স্পষ্ট করে লিখতে হবে, পশুর হাটে আলাদা পোশাকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে এবং প্রয়োজনে হাটের চারপাশে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে, কোনোভাবে হাসিলের টাকা বেশি নেয়া যাবে না এবং হাসিলের কমিশন প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। হাটের নির্ধারিত এলাকার বাইরে গরু রাখা যাবে না এবং রাস্তার উপর গরু ও গরুর ট্রাক রেখে যানজট সৃষ্টি করা যাবে না, যথাসময়ে হাটের বর্জ্য অপসারণ করতে হবে। যাতে কোনো নোংরা বা আবর্জনা না থাকে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ- কমিশনার জেদান আল মুছা জানিয়েছেন, ঈদে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পশুর হাটের মালিকপক্ষ সহযোগিতা চাইলে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মানবজমিন