সিলেটের কুদরত উল্লাহ মসজিদে উত্তেজনা, মুখোমুখি মুসল্লিরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মে ২০১৯, ১:০১ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
তুচ্ছ ঘটনায় উত্তেজনা চলছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে। মসজিদ কমিটির মুখোমুখি হয়েছেন মুসল্লিরা। মুসল্লিরা জানিয়েছেন, মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মুসল্লিদের অশ্লীল ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। এ কারণে তিনি কমিটিতে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তবে মসজিদ কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, মুসল্লিরা গাড়ি পার্কিংয়ের নিয়মিত স্থান হিসেবে ব্যবহার করছেন মসজিদ চত্বরকে। এতে বাধা দেয়ার কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সিলেটের বন্দরবাজারে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ। নানা ঘটনা এবং ইতিহাসের সাক্ষী এ জামে মসজিদ।
নামাজ আদারের পর কেউ কেউ জরুরি কাজে কুদরত উল্লাহ মসজিদ মার্কেটের পত্রিকা কার্যালয় কিংবা বিভিন্ন লাইব্রেরিতে যান। তবে এখানে সাংবাদিক, সাহিত্যিক কিংবা লেখকদেরই মোটরসাইকেল বেশি থাকে মসজিদ মার্কেটে। ২৩শে মে সিলেট প্রেস ক্লাবের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আফতাব উদ্দিনসহ মুসল্লিরা মোটরসাইকেল রেখে নামাজ পড়তে যান। পরে তারা বের হয়ে দেখেন তাদের মোটরসাইকেলে অন্য তালা ঝুলছে। শেষে মসজিদের পরিচালনা কমিটির কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ করে জানতে পারেন অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ সময় অনেকেই মোটরসাইকেল ছাড়িয়ে নিতে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারিকে ফোন দেন। সাংবাদিক আফতাব উদ্দিন গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, মুকতাবিস উন নূরকে মোটরসাইকেলের জন্য ফোন দিলে তাকে অকথ্য গালিগালাজ করা হয়। এতে তিনি মর্মাহত হন। কোনো সুস্থ মানুষ রমজানের দিনে এভাবে কোনো মুসলমানকে গালি দিতে পারে না বলে মন্তব্য করেন আফতাব। তিনি বিষয়টি স্থানীয় মুসল্লিদের অবগত করেন। একই ভাবে রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক দেওয়ান মুফিজ খান এবং উপশহরের বাসিন্দা আমিনুর রহমান তাদের গাড়ির জন্য যোগাযোগ করলে তাদের একইভাবে হেনস্থা করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে কুদরত উল্লাহ মসজিদে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মুসল্লিরা সেক্রেটারির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে বুধবার সভা করেছেন। কুদরত উল্লাহ মসজিদের সেক্রেটারি কর্তৃক ব্যক্তিগত উদ্যোগে তালাবদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে হাজী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ অ্যান্ড মুসল্লি স্বার্থ সংরক্ষণ আন্দোলনের সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মানবাধিকার নেতা হাজী তোরাব আলী। সভায় বক্তারা বলেন, বে-আইনিভাবে পবিত্র রমজান মাসে মসজিদের সেক্রেটারি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে জোহরের নামাজের পর মুসল্লিদের মোটরসাইকেল তালাবদ্ধ করে রাখেন। এই দাম্ভিকতা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ অসদাচরণ সম্পূর্ণ নিন্দনীয়। তালাবদ্ধ করে রাখা মোটরসাইকেল আসরের নামাজের পর খুলে না দেয়ায় মসজিদের মুসল্লিরা বিক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে সেক্রেটারি মুকতাবিস উন নূরের প্রাইভেটকার তালাবদ্ধ করে দেন। পরে তারাবির নামাজের পর কমিটির মুরব্বিদের অনুরোধে মুসল্লিরা প্রাইভেটকারের তালা খুলে দেন। মুসল্লিদের গাড়ি তালা লাগানোর মাধ্যমে সেক্রেটারি পদের চরম অপব্যবহার করা হয়েছে এবং মুসল্লিদের মসজিদ বিমুখ করার হীন পাঁয়তারা হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তাই এ মসজিদে পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি পদে থাকার নৈতিক অধিকার তিনি হারিয়েছেন। এজন্য অবিলম্বে মসজিদ কমিটি থেকে মুকতাবিস উন নূরকে প্রত্যাহারের জন্য মুসল্লিরা ঐক্যবদ্ধ। সভায় বক্তব্য রাখেন, ব্যবসায়ী ইলাছুর রহমান খান, জোনায়েদ আলী, সবুর মিয়া, রহমত আলী, হাজী আব্দুস সাত্তার, মানবাধিকার নেতা শাহেদ আহমদ, সমাজকর্মী আবদুল মুমিন, সাংবাদিক আব্দুশ শহীদ, ফটোজার্নালিস্ট নেতা সুমন আহমদ প্রমুখ।
কুদরত উল্লাহ মসজিদের মুসল্লি এইচএম আবদুর রহমান জানিয়েছেন, সেক্রেটারি তার গাড়ি নিয়ে মসজিদে কম্পাউন্ডে ঢুকেন। কমিটির সদস্য খলিল আহমদের কয়েকটি ব্যবসায়িক ভ্যানসহ মালামাল মসজিদের চত্বরে রাখেন। এছাড়া পরিচালনা কমিটির সদস্যরা তাদের নিজেদের মতো মসজিদ ব্যবহার করলেও মুসল্লিরা মোটরসাইকেল রাখলেই সমস্যা হয়। এসব নিয়ে আমরা ক্ষুব্ধ। ক্ষমা না চাইলে এ ঘটনা শেষ হবে না বলে জানান তিনি। এদিকে, কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লি বদরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সেক্রেটারি এখানে যা কিছু করছেন এটা তার একার সিদ্ধান্ত নয়। এটা পুরো মসজিদ কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত। এককভাবে এ ঘটনায় কাউকে দোষারোপের সুযোগ নেই। মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জোন হিসেবে মসজিদ চত্বরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে মূলত মুসল্লিরাই বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। তিনি বলেন, বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে আছি আমরা। আশা করি সব পক্ষই শান্ত থেকে মসজিদের সুনাম রক্ষায় বিষয়টি সমাধানে ভূমিকা রাখবে।