কানাইঘাটে অসহায় সালমাদের কুঁড়ে ঘরের জীবন
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০১৯, ১১:৪৮ অপরাহ্ণ
আমিনুল ইসলাম,কানাইঘাট থেকে:
কবিগুরু তার কবিতায় লিখেছিলেন,
একটুখানি হাওয়া দিলে ঘর নরভর করে
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ধরে।
কবি জসিম উদ্দিনের সেই কবিতায় রসুল পুরের আসমানীদের কথা ফুটে উঠলেও এখানে সালমাদের কথা বলা হয়েছে। তাদের বসবাস সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের নন্দিরাই গ্রামে। এটি পুরুষহীন পরিবারে সালমা, দুলাইয়ের যেন এক অসহায় জীবনের গল্প। বর্তমান সময়ে এটিই যেন সেই আসমানীদের নরভর কুঁড়ে ঘর। তবে এটি ভেন্না পাতার ছানি নয়, ছেড়া জং মাখা টিন। স্যাঁত স্যাঁত কাদার মাঝে আধুনিক যুগের এই কুড়ে ঘরে চলছে তাদের জীবন।
দু-মুঠো ভাত যোগাড় করতে প্রতিদিন ভোরে কাজের সন্ধানে তাদের চলে যেতে হয় পৌরসভার বিভিন্ন হোটেল রোস্তারায়। সারা দিন কাজ করে যা পান তা দিয়ে রাতের খাবার নিয়ে কুড়েঁ ঘরে ফিরেন। এভাবে যুগযুগ ধরে তারা এখানে বসবাস করে আসছেন। তাদের বাবা ছেরাগ আলী ও মা বেলা বিবি বহু আগে মারা গেছেন। ছেরাগ আলী তার উত্তরাধীকারী হিসাবে তৎকালীন সময়ে দুই ছেলে ও অবুঝ ৫ মেয়েকে রেখে যান। কিন্তু অল্প বয়সে রহমান ও শুক্কুর নামে তাদের বড় দুই ভাই মারা যান। এর কিছু দিন পর সালমাদের বড় বোন জয়নবও মারা যায়। এতে সালমারা হয়ে পড়েন নিরুপায়। মেজো বোন রহিমা স্বামীর সংসার করলেও সালমা, দুলাই, গুলেনুর স্বামীর সংসার ছেড়ে পিতার রেখে যাওয়া ভিটায় বসবাস করছেন। এর মধ্যে গত কয়েক বছর পূর্বে ছোট বোন গুলেনুরও মারা যায়। এতে গুলেনুরের রেখে যাওয়া ২টি সন্তানসহ বর্তমানে এই কুঁড়ে ঘরে সালমাদের ৫ সদস্যের বসবাস।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায় সালমাদের করুণ দুঃখের জীবন। সামন্য বৃষ্টি হলেই ছেড়া টিনের ছানী দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। এখানেই শেষ নয়। কথায় আছে মরার উপর খাড়া ঘাঁ। তাদের সেই কুঁড়ে ঘরটির চারীদিক দখল করে রেখেছে নিষ্টুর জলাবদ্ধতা। উঠানে রয়েছে হাটু জল নেংরা পানি। সব মিলিয়ে বর্তমান অধুনিক যুগ থেকে সালমাদের জীবন যেন ভিন্ন। সমাজের সচেতন মহলের কাছে প্রকৃতি যেন বলছে এরজন্য দায়ী কে? কই তাদের পাশেতো সামাজের কেই এখনও দাড়ায়নি। এসময় হাটুজল কাদায় দাড়িয়ে কথা হয় সালমার বড় বোন দুলাইয়ের সাথে তিনি জানান আমারা অন্ধ মানুষ, লেখা পড়া জানি না। বৃদ্ধ এই বয়সে ভোর হলেই খাবার যোগাতে কাজের সন্ধানে দুই বোন বের হই। আর সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরি। কই আমাদের খবরতো কেউ রাখে না? নির্বাচন আসলে সবাই আসে। এর পর কোন নেতার খবর নেই। ভাই, সারা দিন কাজ করে রাত্রে শুইতে গেলে গায়ের উপর বৃষ্টির পানি পড়ে। কিন্তু ঘরটি তৈরী করাতো দুরের কথা মেরামতেরও কোন পয়সা নেই। আর জলাবদ্ধতার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন এক সময় আমাদের বাবা ছিল, মা ছিল, ভাইয়েরা ছিল, সুন্দর একটা উঠানও ছিল। কিন্তু আজ আর তা নেই। তা গাঙ হয়ে গেছে। কোন দিকে পানি যাওয়ার রাস্তা নেই। আগে যেদিকে পানি যেত তা বন্ধ হয়ে গেছে।
এভাবে বৃদ্ধ দুলাই আবেগঘন ভাসায় কথায় বলেছেন। তবে যাই হোক কে আছেন সালমাদের দুঃখ কষ্ট লাগবে এগিয়ে আসতে? আর দ্রুত সালমাদেরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে উদ্যেগ নিতে হবে। অন্যতায় নিম্ন মানের নোংরা পরিবেশে এদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।