বালাগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র দাস (রাকু) আর নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০১৯, ৫:৪৪ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
একমুঠো মাটির মালিকানা না পেয়েই চলে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র দাস রাকু । ১৯৭১ সালের মুক্তি সংগ্রামের এ লড়াকু সৈনিক পাকিস্তানীদের বুলেট ও রক্তচোখ উপেক্ষা করে দেশের জন্য বিজয় ছিনিয়ে আনলেও মরণব্যাধী ক্যানসারকে পরাস্ত করতে পারেননি তিনি। পুরোটা জীবন দারিদ্রতায় ধূকতে ধূকতে শনিবার দুপুর ১টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বালাগঞ্জের চাঁনপুর গ্রামের রসুমনি দাসের পুত্র রাখাল চন্দ্র দাসের আজীবন আকুতি ছিলো সরকার থেকে তাকে একটি ঘর বানিয়ে দেওয়ার। বাস্তুহীন রাখাল চন্দ্র দাস দীর্ঘদিন ধরে গোয়ালা বাজার ইউপির সরকারী ভূমিতে বাস করছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আপনারা সবাই বলে কয়ে সরকার থেকে আমার জন্য একমুঠো মাটির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন?’
রাখাল চন্দ্রের এ আকুতিতে এগিয়ে এসেছিলো ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসন। তাঁকে ঘর বানিয়ে দিতে খাস জায়গার খোঁজ নেওয়াও শুরু হয়েছিলো। কিন্তু এরইমধ্যে তিনি (রাখাল চন্দ্র) চলে গেলেন অজানা গন্তব্যে।
৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় রাখাল চন্দ্র ঢাকা পিলখানায় বিডিআরে চাকুরী পেয়েছিলেন। কিন্তু ১০ বছর চাকুরীর পর ১৯৮২ সালে বিনা কারণেই চাকুরীচ্যুতি ঘটে তার। এরপর নানা জায়গায় ধর্ণা দিয়েও চাকুরী ফেরৎ পাননি তিনি। চাকুরী হারানোর পর চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছিলো অভাব। তাইতো্ আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘যুদ্ধর সময় যেরা রাজাকার আছিল, যেরা মারিয়া খাইছে, হেরা অকন ভালা আছে। আর আমার মতো যেরা জীবন বাজী রাখিয়া পাকিস্তানীর লগে যুদ্ধ করছে তারা বাঁচার লাগি একটা চাকরী খুঁজিয়া পায় না।’ রাখাল চন্দ্রের এই আক্ষেপ, ক্লেশ দূর হয়নি তার জীবদ্দশায়। চিরকালিন শোক হয়ে তা গেঁথে থাকলো তাঁর পরিবারের কাছে।
রাখাল চন্দ্র দাসের শারিরীক অবনতির খবর পেয়ে তার গোয়ালাবাজারস্থ অস্থায়ী বাসায় ছুটে এসেছিলেন ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান। তাঁর উদ্যোগে মরণাপন্ন রাখাল চন্দ্রকে এম্ব্যুলেন্স যোগে সিলেট এম এ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় রাখাল চন্দ্র দাসের।
রাখাল চন্দ্রের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসন। একবার্তায় প্রশাসন কর্মকর্তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র দাস দেশের সূর্য্য সন্তান। তাঁর মৃত্যুতে আমরা ৭১ রণাঙ্গনের একজন সাহসী সন্তানকে হারালাম। নেতৃবৃন্দ রাখাল দাসের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিবারের গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র দাসের মৃত্যুতে পৃথক পৃথক বার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন বালাগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফতাব আহমদ ও ওসমানীনগর প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।