ব্রিটেনে আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্প্রদায়গতভাবে এগিয়ে বাংলাদেশীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ আগস্ট ২০১৭, ২:৪৯ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিস: ব্রিটেনে আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্প্রদায়গতভাবে সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশীরা। গত ৬ আগস্ট প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পরিবারগুলোর আয় ২০০০ সালের পর থেকে প্রায় ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্য রিসোলিউশন ফাউণ্ডেশন এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০১-০৩ সাল থেকে ২০১৪-১৬ সালে বাংলাদেশি পরিবারগুলোর আয় বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। যা অন্য যে কোনো সম্প্রদায়ের তুলনায় আয় বৃদ্ধির শীর্ষে। এরপরেই আছে পাস্থিানী পরিবারগুলো। তাদের গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ শতাংশ। এ সময়ে শেতাঙ্গ ব্রিটিশদের আয় বেড়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ।
তবে আয় বৃদ্ধি পেলেও সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশি পরিবারগুলোর আয় শ্বেতাঙ্গ পরিবারগুলো তুলনায় এখনও অনেক কম। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় বাংলাদেশি পরিবারগুলোর আয় প্রায় ৩৫ শতাংশ কম। পাকিস্থানী পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে আয়ের এ ব্যবধান ৩৪ শতাংশ। আর আফ্রিকানা আয়ের দিক থেকে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় পিছিয়ে আছে ২২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উল্লেখিত সময়ে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানী সম্প্রদায়ের লোকদের কর্মসংস্থান বেশ বেড়েছে। শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হার অনেকটা অপরিবর্তিত থেকেছে। আবার বাংলাদেশি ও পাকিস্থানী পুরুষদের সাপ্তাহিক আয় বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। আর অন্যান্য সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এ আয় বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। যে কারণে আয় বৈষম্য ঘোচাতে বেশ এগিয়ে গেছে বাংলাদেশি ও পাকিস্থানী সম্প্রদায়।
আবার পরিবারে সন্তান-সন্ততির সংখ্যাও বাংলাদেশি ও পাকিস্তানী পরিবারগুলোর আয় বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানী পরিবারগুলোতে গড় সন্তানের সংখ্যা ছিল ২.১। আর বর্তমানে সেই সংখ্যা পরিবার প্রতি ১ দশমিক ৩ এ নেমে এসেছে।
‘লিভিং স্ট্যান্ডার্ডস বাই অ্যাথনিসিটি’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর বাড়ির মালিকানার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা গেছে ৫০ শতাংশেরও বেশি শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির নিজেদের বাড়ি রয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশি, কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বাড়ির পরিমাণ মাত্র এক-চতুর্থাংশ। বাড়ির মূল্য বিবেচনায় ব্রিটিশ পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশি পরিবারের আয়ের ব্যবধান প্রায় ৯ হাজার ৮০০ পাউন্ড। শতকরা হিসেবে যা ৪৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে এই ব্যবধান অনেক কমে আসতে শুরু করেছে। এই সময়ে ব্রিটিশ পরিবারের তুলনায় বাংলাদেশিদের আয় বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। বাঙালি নারীদের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধিও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, শ্বেতাঙ্গ নারীদের কর্মসংস্থানের হার ৭২ শতাংশ, বাংলাদেশি নারীদের ৩৫ শতাংশ এবং পাকিস্তানী নারীদের কর্মসংস্থানের হার ৩৭ শতাংশ।
সার্বিকভাবে ১৪ বছর আগের তুলনায় ব্রিটেনে নারীদের কর্মসংস্থানের হার অনেক বেশি বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ১৪ বছর আগে বাংলাদেশি নারীদের কর্মসংস্থানের হার ছিল ১৭ এবং পাকিস্তানীদের নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ছিল ২৭ শতাংশ।
রেজুলেশন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষণা দলের প্রধান অ্যাডাম কর্লেট বলেন, ‘বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও কৃষ্ণাঙ্গ নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানে আয় বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের অনুপ্রাণিত করার মতো। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন শতাব্দীতে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি পরিবারগুলো আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল। এজন্য কর্মসংস্থানসহ ভূমিকা রাখা ক্ষেত্রগুলোকে স্বাগত জানাই।’
গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর পরিবারগুলো বছরে ৮ হাজার ৯০০ পাউন্ড স্টার্লিং কম আয় করে। ব্রিটেনে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর জীবনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনের উপসংহার টানা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘এসব সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো এখনও নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু ২০০১-০৩ সালের পর থেকে এসব গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক আয় অনেক বেড়েছে। উচ্চ ও নিম্ন আয়ের ব্যবধান কমেছে।’
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও কৃষ্ণাঙ্গদের আয় বেড়েছে। ২০০১-০৩ সালের তুলনায় তাদের আয় বৃদ্ধি যথাক্রমে ১৭, ১০ ও ৭ শতাংশ ছিল। যদিও শ্বেতাঙ্গদের আয় খুব বেশি পালটায়নি।