অবশেষে মুখ খুললেন পাভেল : লিটু সন্ত্রাসী নয়, আমার গ্রুপের কর্মী
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুলাই ২০১৭, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
অবশেষে মুখ খুললেন পাভেল। বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত নিজের গ্রুপের কর্মী নিহত লিটুর বিষয়ে মুখ খুললেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক ও বিয়ানীবাজার উপজেলা বিবাদমান পাভেল গ্রুপের নেতা পাভেল মাহমুদ।
যদিও লিটু নিহত হওয়ার পর তাঁর গ্রুপের কয়েকজন কর্মীর আটক হলেও কোন বিবৃতি দেননি পাভেল মাহমুদ। এমনকি এবিষয়ে জানতে তাঁর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বন্ধ পাওয়া যেত তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও। অবশেষে মুখ খুললেন তিনি। নিহত লিটুকে তাঁর গ্রুপের কর্মী দাবী করে তাঁর হত্যার বিচারও চাইলেন পাভেল।
তিনি বলেন, আমিও চাই লিটু হত্যার বিচার হোক। লিটু আমার গ্রুপের কর্মী, সি কোন সন্ত্রাসী নয়। একটি অনাকাংখিত ঘটনায় সে নিহত হয়েছে, আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই। এর সাথে সুষ্টু তদন্তস্বাপেক্ষে ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহিৃত করে বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
লিটু নিহত হওয়ার পর তাকে “সন্ত্রাসী” বলায় সিলেট জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে পাগল আখ্যায়িত করে পাভেল বলেন, এরা পাগল না হলে এরকম কথা বলতে পারতো না।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দুপুরে বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসের অর্থনীতি বিভাগের ১০২ নং কক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমদ লিটু নিহত হওয়ার পর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক এম. রায়হান চৌধুরী নিহত লিটুকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে বিবৃতি দেওয়ার পর থেকে বিয়ানীবাজারের সচেতন মহলসহ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন।
তারা জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের এমন বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অবশেষে লিটুকে সন্ত্রাসী বলায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, তাঁর গ্রুপের নেতা পাভেল মাহমুদও।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম. রায়হান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে ছেলে ছাত্র নয় সে ছাত্রলীগ হলো কিভাবে। সে তো নিজে অস্ত্র নিয়ে কলেজে গিয়েছে। আমরা কলেজের অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। কলেজের অধ্যক্ষ বলেছেন সে কলেজের ছাত্র নয়, সন্ত্রাসী। তাই কলেজ কর্তৃপক্ষের কথা অনুযায়ী আমরা বিবৃতি দিয়েছি-এমনটি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা বছরখানিক পূর্বে বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগের সকল ধরণের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে বলেছিলাম, ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কেউ কোন কুকর্ম করে, তাহলে এর দায়ভার ছাত্রলীগ নেবে না। সুতরাং বিয়ানীবাজারে লিটু হত্যা তাদের গুষ্টিভিত্তিক দ্বন্ধ, এর দায় ছাত্রলীগ নিবে না।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দ্বারকেশ চন্দ্র নাথের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, আমি কেন নিহত লিটুকে সন্ত্রাসী বলতে যাবো। সে আমার কলেজের ছাত্র না, তা ঠিক। কিন্তু সে সন্ত্রাসী কিনা, তা আমি কিভাবে বলবো।
তাছাড়া সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কেউ আমার সাথে কোন যোগাযোগও করেন নি। সুতরাং যারা এরকম বলছেন, তারা নিজেদের দায় এড়ানোর জন্যই বলছেন। এই কথা একদম বানোয়াট।
উল্লেখ্য, গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ১০২ নং কক্ষে নিজ গ্রুপের নেতাকর্মীদের পাশেই আকস্মিক গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নির্মমভাবে নিহত হন উপজেলা ছাত্রলীগের পাভেল গ্রুপের সক্রিয় কর্মী ও পৌরশহরের খাসা পন্ডিতপাড়ার খলিলুর রহমান খলিলের একমাত্র পুত্র খালেদ আহমদ লিটু (২৬)। এঘটনায় পুলিশ একই গ্রুপের ৩ জনকে ঘটনার পরই আটক করে এবং রাতে একজনকে আটক করে মঙ্গলবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করলেও এর রহস্য উদঘাটন করতে পারে নি। এঘটনায় নিহত লিটু’র বাবা খলিলুর রহমান খলিল বাদী হয়ে পাভেল গ্রুপের নেতা পুলিশের হাতে আটক ফাহাদ (২৫), কামরান (২৬), এমদাদ (২৫), দেলোয়ার হোসেন মিষ্টু (২৭) কে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন ছাড়াও এজাহারনামীয় আসামী করা হয়েছে একই গ্রুপের কাওছার আহমদ(২৬), জুয়েল আহমদ শিপু (২৪) ও সাহেদ আহমদকে (২৭)। আটক ৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, লিটু হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এজাহারনামীয় ৪ আসামীকে ইতোমধ্যে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।