বালাগঞ্জে আকষ্মিক পানি বৃদ্ধি : কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে ৩০ গ্রাম প্লাবিত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুন ২০১৭, ৫:২৬ অপরাহ্ণ
রজত দাস ভুলন,বালাগঞ্জ থেকে : সিলেটের বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে কুশিয়ারা নদীর পানি আকষ্মিক বৃদ্ধি কারণে নদী পারের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা এখন আতংকে দিন অতিবাহিত করছে। নদীর তীর ঘেষা বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্মুখের রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ওসমানীনগরে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ (কুশিয়ারা ডাইক) ভেঙ্গে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একইভাবে বালাগঞ্জের করচারপাড় এলাকায় কুমিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার পানি বৃদ্ধির কারণে কুশিয়ারার ডাইক করছারপাড় অংশ ভেঙ্গে গেছে। জনগণ চলাচলের জন্য রাস্তায় বাসের সাকোর ব্যবস্থা করছে উপজেলা প্রশাসন। নির্মানাধীন বালাগঞ্জ-খসরুপুর সড়ক নতুন করে ডুবে গেছে। আক্রান্ত হয়েছে রাধাকোনা, করছারপাড়, রসিদপুর, বঙ্গপুর ও হামছাপুর, কালিয়ারগাও ।
কুশিয়ারা নদীর পানিতে আকান্ত হবে আরো কয়েকটি গ্রাম। মারত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে স্থানীয়রা আশংকা প্রকাশ করেছেন। গত কয়েক দিনের টানা অবিরাম বৃষ্টিতে বালাগঞ্জ বাজারে ভিতরে পানি প্রবেশ করেছে। পূরাণ থানার মধ্য দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উঠান, ডিএন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ডুকে পড়েছে। তয়রুন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিতরে প্রবেশের রাস্তা ও স্কুলের মাঠে পানি প্রবেশ করার কারণে শিক্ষার্থীদের চলাচলের ব্যাঘাত ঘটছে। ইউআরসি অফিসের রাস্তায় পানি প্রবেশ করায় প্রশিক্ষনার্থীরা দুর্ভোগে যাতায়াত করেছেন। নারী প্রশিক্ষানার্থী শিক্ষকরা পানি ডিঙ্গিয়ে ইউআরসি অফিসে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের মূল সড়ক ও অফিসপাড়া। উপজেলা প্রশাসনের মাঠে হাঠু সমান পানি উঠার কারনে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার অফিসগুলোর ভিতরে পানি প্রবেশ করেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অফিস পাড়ার আবাসিক এলাকা নিমজ্জিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
এদিকে ওসমানীনগর উপজেলাধীন কুশিয়ারা নদীর বাঁধ (কুশিয়ারা ডাইক) ভেঙ্গে ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার দু’দিনে সাদীপুর ইউনিয়নের লামাতাজপুর জব্বার মিয়ার বাড়ির পাশে ডাইকের প্রায় ৭০ ফুট এলাকা কুশিয়ারা নদীর পানির প্রবল ¯্রােতে ভেঙ্গে গিয়ে ২৫টি গ্রাম নদীর পানিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সাদীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কালনী চর, উত্তর কালনী চর, পূর্ব কালনী চর, সুরিকোনা, ইসলামপুর, সম্মানপুর, মোকামপাড়া, সুন্দিখলা, রহমতপুর, পূর্ব সুন্দিখলা, সম্মানপুর, চাতলপাড়, সাদীপুর, সৈয়দপুর ও পূর্ব তাজপুর, টুকরাগাঁও, লামা তাজপুর, চরা তাজপুর, গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার লোক।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে বলির স্বীকার হয়েছেন তারা। গত শীত মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবুল হোসেন এন্টারপ্রাইজ নিয়ম অনুযায়ী ডাইকের সাড়ে তিন ফুট মাটি ভরাট করেনি। এ অনিয়মের কারণেই কুশিয়ারা নদীর পানির চাপের কারণে ডাইক ভেঙ্গে গেছে।
অনিয়মের এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ।
এ দিকে ওসমানীনগরের সাদীপুরে কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে যাবার খবরে ভাঙ্গনস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ, ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ও সাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব।
এসময় ভাঙ্গন রোধে সাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রবকে কিছু বস্তা দেয়া হয় বলে জানান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ।
তিনি বলেন, ডাইকের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছি। এখানে প্রায় এক কিলোমিটার ডাইক একেবারে নিচু। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় চোরম্যানকে বস্তায় বালি ভরাট করে দুই লেয়ারে ডাইকের ওপর সাজিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ বালাগঞ্জ উপজেলার শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল ছালাম বলেন, যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে কুশিয়ারা নদীর বিপদ সীমার উপরে উঠে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। আর পানি বিপদ সীমার উপরে উঠলে পুরো বালাগঞ্জ প্লাবিত হয়ে যাবে।
সাদীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রবের অভিযোগ, গত শীত মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবুল হোসেন এন্টারপ্রাইজ নিয়ম অনুযায়ী ডাইকের সাড়ে তিন ফুট মাটি ভরাট করেনি। এই অনিয়মের কারণেই কুশিয়ারা নদীর পানির চাপের কারণে ডাইক ভেঙ্গে গেছে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ডাইকের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছি। কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বালাগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা প্রদিপ সিংহ বলেন, বালাগঞ্জ অংশের কুশিয়ারা ডাইক করচারপাড়ের দিকে ভেঙ্গে গেছে। জনসাধারণ চলাচলে সাকোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বিবরণ দিয়ে রিপোর্ট ঢাকা প্রেরণ করা হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসন এলাকা জলমগ্ন হয়ে গেছে। আরেকটু পানি বাড়লেই অফিস ভবনের নিচতলার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে।