শ্রীমঙ্গলে ভেজাল গুড়া মশলা : মিলের মালিককে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৫৭ অপরাহ্ণ
শ্রীমঙ্গল, প্রতিনিধিঃ
শ্রীমঙ্গলের মশলা মিলে বিভিন্ন মশলার সাথে ধানের ভুষি, চালের গুড়া,সো মিলের কাঠের গুড়া, বাসন্তী,হলুদ ও বিভিন্ন রং ও এক ধরনের সেন্ট মিশিয়ে তৈরা করা হচ্ছে ভেজাল মরিচ, হলুদ, ধনিয়া, জিরার গুড়া মশলা।
আর এ গুড়া মশলাই বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে ও গ্রামে গঞ্জের বিভিন্ন দোকানে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ তাই কিনে নিয়ে তৈরী করছেন দৈনন্দিন আহারের তরী-তরকারীসহ বিভিন্ন খাবার। এ ভেজাল খাবার খেয়ে নিজের অজান্তেই মানুষ হয়ে পড়ছেন অসুস্থ। অনেকে মারাও যাচ্ছেন।
প্রায়ই মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হয় ভেজাল ব্যবসায়ীদের। জরিমানা করার পর কিছু দিন অতিবাহিত হতে না হতেই তারা আবারও শুরু করে দেয় এ ভেজাল ব্যবসা।
সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার নতুনবাজারের সোনারবাংলা রোডে মোঃ আঙ্গুর মিয়ার মালিকানাধিন মাসুম মশলা মিলে দরজা বন্ধ করে ভেজাল মশলা তৈরী করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে পুলিশসহ শ্রীমঙ্গল সহকারী কমিশনার(ভুমি)বিশ্বজিত পাল ঘটনাস্থলে পৌছে হাতে নাতে ধরেন এ ভেজাল কর্মকান্ড ও কর্মকান্ডে কর্ত্তব্যরত লোকজনকে। সাথে সাথে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এই প্রতিষ্টানের মালিককে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেন বলে জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বিশ্বজিৎ পাল ।তিনি জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের খবর পেয়ে মালিক আঙ্গুর মিয়া পালিয়ে যায়। তবে হাতে নাতে আটক করেন প্রতিষ্টানটির ৩জন শ্রমিককে। শ্রমিকরা উপস্থিত জনগনের সামনেই তারা যেভাবে মশলায় ভেজাল দ্রব্য মিশ্রিত করে তা স্বীকার করে। এ সময় ভ্রাম্যমান আদালত প্রায় ৪শত কেজি ভেজাল মশলা জব্দ করে। পরে এ ভেজাল মশলা গুলো শহরের হবিগঞ্জ সড়কের ভুরবুড়িয়া ছড়ায় ভাসিয়ে দেয়া হয়।
অভিযান পরিচালনার সময় ভ্রাম্যমান আদালতে আটক মিলের শ্রমিক গোপাল দাশ বলেন, বিভিন্ন গ্রাম এলাকা থেকে ও খোলা বাজারের দোকানীরা নিজে হলুদ-মরিচ-ধনিয়া নিয়ে এসে এখানেই তারা তা মিশ্রিত করে নিয়ে যায়। আমরা শুধু মশলা ভাঙ্গার টাকা নেই।এ সময় ভ্রাম্যমান আদালতে আসা শ্রীমঙ্গল থানার এস আই রাব্বি জানান, এখানে যে সকল মশলা দোকানী আসেন তাদের প্রায় সবাই এরকম ভেজাল করে থাকেন। যার ফলে তারা এই ভেজাল দ্রব্য এনে এখানে স্টক করে রাখে। ফলে মিলের মালিক ও মশলা বিক্রেতা দুইজনই অপরাধী।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন সত্যকাম চক্রবর্তী জানান, যে কোন খাদ্যের সাথে অন্য যে কোন খাদ্য মিশ্রন দূষনীয়। এর ফলে দুই ধরনের মশলার সংমিশ্রনে সে মশলার গুনাগুনের বিকৃতি ঘটে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, এর সাথে সাথে যদি ক্যামিকেল দিয়ে তৈরী এ সব রং মানুষের পেটে যায় তখন বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে গ্যাষ্টএন্টেরাইটেজ এর প্রার্দুভাব দেখা দেয়। এতে মানুষের গ্যাস্টিক ও আন্ত্রীক রোগের সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়াও এই মশলার সাথে কেমিকেল রং পেটে শোধন হওয়া পর পর এটি লিবার ও কিডনীকে নষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। তিনি জানান, এর দ্বারা অনেক সময় আমাদের স্নায়ুতন্ত্রও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভ্রাম্যমান আদালতে আরো উপস্থিত ছিলেন এস আই রাব্বি, এ এস আই এনামুল ও স্থানীয় বেশ কিছু ব্যবসায়ী।এ সময় ভ্রাম্যমান আদালতের পরিচালক শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বিশ্বজিত পাল আরো জানান, পর্যায়ক্রমে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সবকটি মশলার মিলেই তারা অভিযান করবেন এবং ভেজাল ধরা পড়লেই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন।