ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের আত্মপ্রকাশের ইতিহাস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মার্চ ২০১৭, ৪:৩৩ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ তখন ১৭৪৩ সাল। পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেইনে সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে খ্রিস্টান প্রোটেস্ট্যান্ট অনুসারীদের গির্জা। প্রায় দেড় শ বছর পর ১৮৯৭ সালে একই ভবনটি হাত বদল হয়ে রূপ নিলো ইহুদিদের উপসনালয় সিনাগগ হিসেবে। এরপর মাত্র ৮০ বছরেরও কম সময়ের মাথায় ১৯৭৬ সালে ওই একই ভবনটিতে বাংলাদেশিরা প্রতিষ্ঠা করলো মসজিদ। কয়েক শতকের বিবর্তনের সাক্ষী সেই ভবনটিই আজকের ব্রিক লেইন জামে মসজিদ। পূর্ব লন্ডনে বাঙালিদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার এই গল্প রংতুলির আঁচড়ে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ শিল্পী অ্যালিস সেইলি। পূর্ব লন্ডনের হ্যানবারি স্ট্রীটের কবি নজরুল সেন্টারে গত ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর আলতাব আলী ও ব্রিক লেইন শীর্ষক সেইলির একক চিত্র প্রদর্শণীতে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশীদের আত্মপ্রকাশের গল্প।
বদলে যাওয়া পূর্ব লন্ডনের গল্পই শুধু নয়, অ্যালিস সেইলির ক্যানভাসে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশিদের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিও। নজরুল সেন্টারের দেয়ালে টাঙানো একটি ক্যানভাসে দেখা যায় বর্ণবাদী শেতাঙ্গদের পরিচয়ধারী সাদা কাপড়ে লাল ক্রস আঁকা পতাকা। এর পরের ক্যানভাসেই দেখা যায়, সেই পতাকার লাল ক্রস থেকে বের হয়ে আসছে বাঙালি যুবক আলতাব আলীর রক্তাত্ব প্রতিকৃতি।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালের ৪ মে ব্রিক লেইনের কাছেই বাংলাদেশি যুবক আলতাব আলী বর্ণবাদীদের হামলায় নিহত হন। ওই হত্যার প্রতিবাদে গড়ে উঠা আন্দোলন পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশিদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
অ্যালিস সেইলি এই প্রতিবেদককে বলেন, পূর্ব লন্ডনে শেতাঙ্গ ও ইহুদিদের সাথে বাঙালির লড়াই নিয়ে পরিচালক ফিল ম্যাক্সওয়েল ২০১১ সালে ক্যাবল স্ট্রিট টু ব্রিক লেইন নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেন। ওই সিনেমায় ব্যবহারের জন্য তাঁকে এসব চিত্র আঁকতে বলা হয়েছিলো। তিনি বলেন, জাপান থেকে আনা বিশেষ কাগজে এসব চিত্র আঁকা হয়েছে। নিহত আলতাব আলীর প্রতিকৃতির বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলতে তিনি আঙ্গুল কেটে নিজের রক্ত ব্যবহার করেছেন। ষায়োর্ধ্ব বয়সের সেইলি বলেন, পূর্ব লন্ডনে বসবাসের সুবাদে বাঙালির অনেক বিচিত্র সংস্কৃতিতে তিনি আকৃষ্ট। বেশ কিছুদিন যাবত বাংলা শেখার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসব্যাপী চলে ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা’ উৎসব। এই উৎসবের অংশ হিসেবেই প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাজ্যে বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে নানা আলোচনা ও প্রদর্শণী। অ্যালিস সেইলির চিত্র প্রদর্শণী উদ্বোধনের আগে গবেষক আনসার আহমদ উল্লাহ‘র নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় ‘হিস্টোরি ওয়াক’। যার মাধ্যমে লন্ডনে অবস্থিত শহীদ মিনারসহ বাঙালি ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত নানা স্থাপনা ঘুরে দেখা হয়। ‘এ সিজন অব বাংলা ড্রামা’র এটি ছিলো ১৩ তম আয়োজন।