বিশ্বনাথে গণধর্ষণ : ৫ জনকে আসামী করে মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি:
সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে প্রেমিকের হাত ধরে ঘর পালিয়ে আসা কিশোরীকে অচেতন ইনজেকশন প্রয়োগ করে আটকে রেখে ৮দিন ধরে গণধর্ষণ করার ঘটনায় থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে কিশোরীর ভাই সুহেল আহমদ বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ ও ২ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় ধর্ষণ মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ১২ (১২/০২/১৭ইং)।
মামলার অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত ওয়াব উল্লাহ’র পুত্র শফিক মিয়া (২৬), একই গ্রামের খলিলুর রহমান’র পুত্র রুবেল মিয়া (২৮), মৃত সাইদুর রহমান’র পুত্র আফজল হোসেন (২৭)। এছাড়া আরোও ২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকেও এমমামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, ধর্ষিতার পরিবারকে আর্থিক (সাড়ে ৩ লাখ টাকা) লোভ দেখিয়ে ঘটনাটি আপোষ-মিমাংশায় শেষ করার উদ্যোগ গ্রহণকারী ‘মাতব্বররা’ ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার পায়তারা ও সময় কালক্ষেপন করেছেন বলে ‘স্থানীয় সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে’ অভিযোগ করেছেন ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীর পরিবার।
জানা গেছে, ধর্ষকদের কবল থেকে ৬ ফেব্রুয়ারী মুক্ত হওয়ার পর চিকিৎসা গ্রহণ করে মাতব্বরদের আপোষ-মিমাংশার প্রস্তাবে ধর্ষিতা ও তার ভাই আত্মগোপনে ছিলেন। অবশেষে শনিবার দিবাগত ভোররাতে বিশ্বনাথ থানার এসআই কল্লোল গোস্বামী’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ ধর্ষিতাকে সিলেটের মেন্দিভাগ এলাকার একটি ভাড়াটিয়া বাসা থেকে উদ্ধার করে। এরপূর্বে গণধর্ষণের খবর সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম পিপিএম ধর্ষকদের বাড়িতে একাধিক বার অভিযান পরিচালনা করেন।
ধর্ষণের ঘটনায় ‘৩ জনের নাম উল্লেখ ও ২ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে’ মামলা দায়ের করার সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম পিপিএম, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মুরব্বীরা বিষয়টি আপোষ-মিমাংশায় নিষ্পত্তি করার নামে সময় কালক্ষেপন (নষ্ঠ) করেছেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জানুয়ারী প্রেমের টানে প্রেমিক বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের শফিক মিয়া’র হাত ধরে পিতার ঘর থেকে পালিয়ে আসেন ছাতক উপজেলার সৈয়দেরগাঁও ইউনিয়নের দশঘর গ্রামের সামছুর রহমানের মেয়ে ১৭ বছরের কিশোরী রিমা বেগম (ছদ্মনাম)। এরপর রামচন্দ্রপুর গ্রামে ধর্ষক রুবেল মিয়ার দোকানে রিমা বেগমকে আটকে রেখে চেতনানাশক ইনজেকশন প্রয়োগ করে টানা ৮দিন ধরে প্রেমিক শফিক মিয়া ও তার আরোও ৪ বন্ধু তাকে (রিমা) পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। অবশেষে ৬ ফেব্রুয়ারী রিমা বেগমকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে দিয়ে ধর্ষিতার ভাইকে ফোন করে বোনের খবর দেন ধর্ষকরা। সেই খবরের ভিত্তিতে সিলেট কাজির বাজার সেতুর উপর থেকে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করা হয়। এসময় স্থানীয় জনতা অটোরিকশা চালক বিশ্বনাথ উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের মৃত আব্দুন নুরের পুত্র গফুর আলী’কে আটক করে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান মকন মিয়ার কাছে নিয়ে যান। সেখানে অটোরিকশা চালক ও ধর্ষিতার কাছ থেকে ধর্ষণকারিদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়। এরপর মকন মিয়ার সংবাদের প্রেক্ষিতে বিশ্বনাথের রামপাশা ইউপির মেম্বার তাজ উল্লাহ ও ধর্ষকদের পরিবারের সদস্যরা সালিশ বৈঠকে যোগদেন। এসময় চেয়ারম্যান মখন মিয়া বিষয়টি আপোষে নিষ্পত্তির জন্য ইউপি সদস্য তাজ উল্লাহ’সহ ধর্ষকদের মুরব্বিদেরকে দায়িত্ব প্রদান করে।