সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দুদক কর্মকর্তাদের উপর হামলা, থানায় জিডি
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২:৫২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার ঘটনায় সিলেট কতোয়ালি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন দুদকের সিলেট কার্যালয়ের পরিচালক শারমিন পারভীন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি এ জিডি করেন।
দুদক সিলেট অঞ্চলের উপ-সহকারি পরিচালক ওয়াহিদ মঞ্জুর সোহাগ জিডি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে হামলার শিকার হন দুদক কর্মকর্তারা। এতে দুদকের কয়েকজন সদস্য আহত হন। এসময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক কর্মচারীকে আটক করলেও অন্যদের বাধার মুখে তাকে নিয়ে যেতে পারেনি দুদক। ওই কর্মচারীকে ঘুষসহ হাতেনাতে আটক করা হয় বলে দাবি দুদকের।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এক কর্মচারীকে আটক করে দুদক। এসময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীরা দুদকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।
দুদকের কর্মকর্তারা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুদক, সিলেট কার্যালয়ের পরিচালক শারমিন পারভীনের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এসময় ঘুষের টাকা লেনদেনের সময় ওই কার্যালয়ের অফিস সহকারি আজিজুর রহমানকে আটক করে দুদক। তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অন্য কর্মচারীরা জড়ো হয়ে বাধা দেন। এসময় দুই পক্ষের বাকবিতন্ডা লেগে যায়। পরে জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীন নিজ কক্ষে দুদকের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক চলাকালীন সময়েই জেলা প্রশাসকের কক্ষের বাইরে দুদকের সদস্যের উপর হামলা হয় বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর বাগবাড়ির বাসিন্দা অকিল চন্দ্র সূত্র ধর পায়েল এন্টারপ্রাইজ পেট্রল পাম্প স্থানান্তরের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ব্যবসা বাণিজ্য শাখায় আবেদন করেন। এজন্য ডিসি অফিসের কর্মচারী আজিজুল ইসলামের সঙ্গে ২০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন।
ফাইল ছাড়িয়ে নিতে বৃহস্পতিবার বিকালে টাকা লেনদেনের সময় ডিসির কার্যালয়ে দুদক অভিযান চালিয়ে আজিজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।
দুদক পরিচালক শিরীন পারভিন অভিযোগ করেন, ঘুষের ১০ হাজার টাকা ও জব্দকৃত কাগজ হামলা চালিয়ে আজিজের সহযোগীরা নিয়ে গেছে। আত্মরক্ষার্থে আমরা জেলা প্রশাসকের অফিস রুমে যায়।
এসময় কনস্টেবল মেছবাহ উদ্দিন চৌধুরীকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ কালেক্টরেট সমিতি, সিলেট জেলা শাখার সভাপতি আফসর আহমদ বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে তাঁর অনুমতি না নিয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করা অন্যায়। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। তবে কারো উপর হামলার ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক যখন উভয়পক্ষ নিয়ে বৈঠক করছিলেন তখন অভিযুক্ত কর্মচারী আজিজুর রহমান স্ট্রোক করেন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীনও হামলার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, হট্টগোল শুনে আমি দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু বৈঠকে দুদক কর্মকর্তারা ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেননি। কেবল একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তারা অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আমার কার্যালয়ে বৈঠক চলাকালেই অভিযুক্ত কর্মচারী আজিজুর রহমান অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রুকন উদ্দিন আহমদ বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করতে দুদক কর্মকর্তারা অভিযানে এসেছিলেন। এসময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীদের সাথে তাদের বাধানুবাদ তৈরি হয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনি।