ব্রিটেনে আতঙ্কিত বাংলাদেশীরা : সব মুসলমানদের মেরে ফেলো বলে একের পর এক হামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ৭:২৬ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক, লন্ডন:
ব্রিটেনে একের পর এক হামলায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। বিশেষ করে বাংলাদেশী মুসলিম প্রবাসীরা হঠাৎ হেইট ক্রাইম বেড়ে যাওয়ায় চরম শঙ্কিত হয়ে পরেছেন । গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি ঘঠনায় বাঙ্গালী মহিলারা ঘর থেকে একা বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত লন্ডনের একটি ট্রেইনে এক মুসলিম ব্যাক্তিকে ছুরিকাঘাত করে একই ব্যক্তি অন্য মুসলিমদের ছুরির ভয় দেখিয়ে ধাওয়া করেছে। ধাওয়া করার সময়ে ওই ব্যক্তি উচ্চ স্বরে বলছিল “কিল অল মুসলিমস” অর্থাৎ সব মুসলিমদের হত্যা কর। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বেলা একটার কিছু পরে, ফরেস্ট হিল ট্রেইন স্টেশনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন। আহত ব্যক্তির নাম আসগর আলী। তিনি লন্ডনের টুটিং এলাকায় বসবাস করেন। ঐদিন তিনি গ্রীণ স্ট্রীটের একটি ট্রাভেলস থেকে ওমরা হজ্বে যাওয়ার জন্য টিকিট নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। আসগর আলীর বাংলাদেশে বাড়ি সিলেটর গোলাপগঞ্জ উপজেলার রানাপিং গ্রামে।
বাঙ্গালী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দা শাহ জাহান সুরমানিউজকে বলেন,গত কয়েকদিনের ঘঠনা সত্যিই আমাদের ভীতির সঞ্চার করেছে। বিশেষ করে আমাদের মহিলাদের একা রাস্তায় বের হলেই সমস্যা হচ্ছে। এখন আবার এশিয়ানদের দেখলেই কিল অল মুসলিম বলেই আঘাত করে। এটা আমাদের চরমভাবে সঙ্কিত করে তুলেছে।
রিচার্ড ইটিয়েন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অনার অক পার্ক থেকে ফরেস্ট হিল স্টেশন পর্যন্ত আসার রাস্তা দুই থেকে তিন মিনিটের, ওই সময়েই ট্রেনের ভেতরের যাত্রীদেরভ য়-ভীতি দেখাতে শুরু করে হামলাকারী ওই যুবক। তিনি বলেন, হামলাকারী ছিল কৃষ্ণাঙ্গ এবং পরনে ছিল ঘন কালো রঙ্গের বার্বার জ্যাকেট এবং গাঢ় রঙের জিন্স। সে ট্রেনের ভেতরে হাঁটাহাটি করছিল আর উচ্চস্বরে বিড়বিড় করে বলছিল এবং সবাই তাঁর কথা শুনতে পারছিল। রিচার্ড বলেন, আমি তাকে বলতে শুনেছি “ আই অ্যাম গয়িং টু কিল মি অ্যা মুসলিম”। ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রী তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছিল এবং অনেকে ট্রেনের পেছনের বগিতে চলে যেতে শুরু করেছিল। রিচার্ড ইটিয়েন বলেন, হঠাৎ করে কী মনে করে হামলাকারী ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে দাঁড়ায়; তাঁর চেহারায় ছিল রাগ, ক্রোধ এবং তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে “অ্যা ম্যান অন অ্যা মিশন” অর্থাৎ একটি মিশন বাস্তবায়নে নেমেছে সে।
রিচার্ড ইটিয়েন বলেন, তার সামনে থেকে মুখ ফিরিয়ে ওই ব্যাক্তি ঠিক বিপরীতে বসে থাকা হিজাব পরা এক মহিলার কাছে যায়। হিজাব পরা মহিলার বয়স হবে বিশোর্ধ্ব। হিজাব পরা মহিলার সামনে দাঁড়ানোর ফলে হামলাকারী ব্যক্তির পেছন দিকটা নজরে পড়ে রিচার্ডের। তখনই তিনি দেখতে পান তাঁর ডান হাতে একটি ছুরি আছে। কালো রঙের হাতলের কিচেনের ছুরিটি প্রায় ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা বলে মনে হয়েছে রিচার্ডের। তবে হিজাব পরা মহিলার সামনে ছুরি তাক করে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে হামলাকারী বলে উঠলো “আই ডন্ট ওয়ান্ট মি অ্যা মুসলিম ওয়ামেন, আই ওয়ান্ট মি অ্যা মুসলিম ম্যান” অর্থাৎ আমি মুসলিম মহিলা চাই না, আমি চাই মুসলিম পুরুষ লোক। এর পরই সে ট্রেনের প্রথম কামরার দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। তখনই যাত্রীদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং বেশ কয়েকজন যাত্রী ট্রেনের এলার্ম বাজাতে শুরু করে।