লন্ডনে টানা ২৫ দিন তবলা বাজিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চান বাংলাদেশি সুদর্শন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০১৬, ২:৫১ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিস:
তবলা বাজিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুদর্শন দাশ। গ্রিনেজ বুক অব ওয়ালড রেকর্ডে নাম লেখাতে টানা ২৫ দিন তবলা বাজাবেন তিনি। হাত দিয়ে বাজানো যন্ত্রে এর আগে রেকর্ড আছে ৫শ ১ ঘন্টার। ওই রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়তে সুদর্শনকে বাজাতে হবে ৫শ ২ ঘন্টা। তবে তবলা বিশারদ সুদর্শন চান কমপক্ষে ৫শ ১০ ঘন্টা বাজাতে। যাতে ওই রেকর্ড ভাঙ্গতে কেউ সহসায় সাহস করতে না পারে। আগামী রোববার (২৭ নভেম্বর) পূর্ব লন্ডনের মেনর পার্কের শিভা মুনেতা সঙ্গম (ইউকে) (ACPT) [Shiva Munneta Sangham (UK), 2 Salisbury Road, Manor Park, London E12 6AB]
এর হলরুমে টানা ২৫দিন তবলা বাজাবেন তিনি। ওইদিন দুপুর ২টায় গ্রিনেজ বুক অব ওয়ালড রেকর্ডের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে নিউহ্যাম কাউন্সিলের মেয়র রবিন ওয়েলস আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেকর্ড গড়ার তবলা ম্যারাথনের উদ্বোধন করবেন।
সুদর্শন পত্রিকাকে জানান, গ্রিনেজ বুকে নাম তোলার এই প্রতিযোগিতায় তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য তাঁকে প্রায় ৩ বছরের বেশি চেষ্টা করতে হয়েছে। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট তিনি গ্রিনেজ বুক অব ওয়ালড রেকর্ডের অনুমোদন পান। সুদর্শন জানান, কেবল অনুমোদন পাওয়ার জন্যই তাঁকে টানা ১৫ দিন তবলা বাজানোর ট্রায়াল দিতে হয়েছে। তিনি জানান, গ্রিনেজ বুক অব ওয়ালর্ড রেকর্ডের নিয়ম অনুযায়ী তিনি খাওয়া দাওয়া ও প্রয়োজনীয় কাজ সারার জন্য কিছু সময় নিতে পারবেন। তবে সেটা এক ঘন্টা বাজানোর পর মাত্র ৫ মিনিট। ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু করে আগামী ২০ ডিসেম্বর নাগাদ তিনি ৫শ ১০ ঘন্টা তবলা বাজানোর লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন বলে আশা করছেন।
তিনি আরও জানান যে, সিসি টিভির মাধ্যমে টানা ২৫ দিন তাঁর তবলা বাজানো পর্যবেক্ষণ করবে গ্রিনেজ বুক অব ওয়ালর্ড রেকর্ডের কর্তারা। এছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটি দুটি ভিড়িও ক্যামেরায় ধারণ করা হবে।
আয়োজনটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যে কেউ ভেন্যুতে গিয়ে রেকর্ড গড়ার ঐতিহাসিক এই উদ্যোগের স্বাক্ষী হতে পারবেন। সুদর্শন বলেন, রেকর্ড গড়ে তাঁর কোনো আর্থিক লাভ হবে না। তবে তাঁর এই রেকর্ডের সাথে সাথে বাংলাদেশের নামটিও গ্রিনেজ বুক ও ওয়ালর্ড রেকর্ডে যুক্ত হবে। এটাই তাঁর জন্য বড় পাওয়া।
তিনি জানান, এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২৫ দিনের জন্য হল ভাড়া এবং সিকিউরিটি ও আনুসঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড ব্যয় হচ্ছে। কমিউনিটির অনেকে সদর্শনের এই উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এখনো প্রায় ৪ হাজার পাউন্ডের মত দরকার। সুদর্শনের বিশ্বাস বাংলাদেশের নামটি গ্রিনেজ বুকে উঠাতে তাঁর এই উদ্যোগে অর্থের ঘাটতি হবে না। কমিউনিটির সামর্থবানরা নিশ্চয়ই বাকী অর্থের সংস্থান করতে সাহাযৌর হাত বাড়িয়ে দিবেন। তিনি তাঁর এই উদ্যোগে সকলকে পাশে থাকার অনুরোধ জানান।
সুদর্শন দাশের বাংলাদেশে আদিবাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। অমূল্য রঞ্জন দাশ ও বুলবুল রানী দাশ দম্পতির সন্তান সুদর্শন চার বছর বয়স থেকেই আলাউদ্দিন ললিত কলা একাডেমিতে পণ্ডিত শ্রী শ্যামল দত্তের অধীনে তবলায় তালিম নেয়া শুরু করেন। চর্চা আর একাগ্রতায় তবলায় হাত পাকানো সুদর্শন দাশ ১৯৯০ সালে ফুলকুড়ি আয়োজিত সঙ্গিত প্রতিযোগিতায় তবলায় প্রথম স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে আন্ত কলেজ প্রতিযোগিতায়ও তিনি স্বর্ণ পদক লাভ করেন। এরপর ১৯৯২ সালে চলে যান ভারতের শান্তি নিকেতনে। সেখানে পণ্ডিত বিজন চ্যাটার্জির কাছ থেকেও উচ্চচতর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৯৮ সালে ভারতের বোলপূরের শান্তি নিকেতন তাঁকে তবলা বিশারদ উপাধিতে ভূষিত করে।
এরপর যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো সুদর্শন ২০০৪ সালে লন্ডনে প্রথম তবলা অ্যান্ড ঢোল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। নিউহামের কেথরিন রোড়ে অবস্থিত তাঁর এই একাডেমি। এখানে বর্তমানে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক তবলা প্রতিযোগিতায় ভারতের বেঙ্গালুরুর দ্বিতীয় পুরষ্কার সিলভার মেডেল লাভ করেন সুদর্শন। বর্তমানে তিনি নিউহাম ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে মিউজিক ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সুদর্শনের তবলা ম্যারাথন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কিংবা সাহায্য করতে চাইলে ০৭৪০২৪৪৭৭৭৭ (নাবিল), ০৭৯৫৬৯৮৬৫৫৬ (সলিমুল হক), ০৭৮৭৫৭৩৮৫১৩ (বিজয় মেহের) এবং ০৭৯৫৭৬৬৬৯৯৯ (শাহান) নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে। অথবা Tabla & Dhol Academy Ltd AC. 03845346, SC. 20-57-06. Barclays Bank. এই ব্যাংক একাউন্টে সরাসরি অর্থ সাহায্য পাঠানো যাবে।