ব্রিটেনে মহাসঙ্কট আসন্ন : ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন বাংলাদেশীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০১৬, ৫:১১ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ মহাসঙ্কট আসন্ন ব্রিটেনের জন্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ, অর্থাৎ ব্রেক্সিটের ফলে ব্রিটেনকে গুনতে হবে ১০০ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অর্থ, যা প্রতিবছরের বাজেট ঘাটতিকে করে তুলবে আরো অসহনীয়। কমে যাবে অভিবাসীর হার, বাড়বে ঋণ ও মুদ্রাস্ফীতির হার। আর এতে ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন বাংলাদেশীরা। মন্দা অর্থনীতি, বেকারত্ব এবং ইমিগ্রেশন খাতের অস্থিরতা ব্রিটেনের সামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কমে আসছে ভোগ বিলাস এবং সামাজিক জৌলুস।
ব্রিটেনের জাতীয় অর্থনীতিতে ব্রেক্সিট কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তার একটি সম্ভাব্য রূপরেখা প্রকাশ করেছে দেশটির সরকার। গত বুধবার ঘোষিত ‘অটাম স্টেটমেন্টে ওই রূপরেখা তুলে ধরেন চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড। চলতি বছর ২৩ জুন এক গণভোটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসে ব্রিটেন, যা ব্রেক্সিট নামে পরিচিত।
অটাম স্টেটমেন্টে বলা হয়, ব্রেক্সিটের ফলে অভিবাসী কমে যাওয়াসহ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও সুদের হার হ্রাস পাবে, যার ফলে বেড়ে যাবে মুদ্রাস্ফীতির হার। আর এ জন্য সরকারের ওপর বাড়বে বাড়তি ঋণের চাপ। ট্রেজারির আয়-ব্যয়ের হিসাব তদারককারী ওয়াচডগ বলছে, এ জন্য সরকারকে অতিরিক্ত ঋণ নিতে হবে প্রায় ৫৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন পাউন্ড। অন্যদিকে ২০২০ সাল নাগাদ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আরো ৪০ বিলিয়ন পাউন্ড কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় এ অঙ্কের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ১০০ বিলিয়নের বেশি। চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড ও ট্রেজারি স্পেন্ডিং ওয়াচডগ, ‘অফিস ফর বাজেট রেসপন্সিবিলিটির’ হিসাব এসব তথ্য জানিয়েছে।
গত ২৩ জুনের ঐতিহাসিক গণভোটের পর এই প্রথম ব্রেক্সিটের ফলে জাতীয় অর্থনীতির সম্ভাব্য এই দুর্দশার চিত্র প্রকাশ করল দেশটির সরকার। অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের ফলে ব্রিটেনকে গুনতে হবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অর্থ, যা প্রতিবছরের বাজেট ঘাটতিকে করে তুলবে আরো অসহনীয়।
অটাম স্টেটমেন্টে চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড সম্ভাব্য ঋণের বোঝা ও বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাব্যতার বার্তা শোনালেও ব্রিটেনের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিতে পরিবর্তন আনা দরকার। স্কাই নিউজের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা এ তথ্য জানিয়েছে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪৩ শতাংশ নাগরিকই মনে করেন, ব্যয় সংকোচনে সরকারের লাগাম টেনে ধরা উচিত। অন্যদিকে ২৪ শতাংশই মত দিয়েছেন, অস্টারিটি বা কৃচ্ছ্রসাধনের পক্ষে। অর্থাৎ তারা সরকারি খরচ কমাতে চান।
এ ছাড়া জরিপে দেশের চ্যান্সেলর, শ্যাডো চ্যান্সেলর, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার জনপ্রিয়তা যাচাই করা হয়। দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ ও ভাগ্য নির্ধারণে শ্যাডো চ্যান্সেলর জন ম্যাকডোনেলের চেয়ে ফিলিপ হ্যামন্ডকেই এগিয়ে রাখছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। আর দেশ পরিচালনায় লেবার লিডার জেরমি করবিনকে উপযুক্ত মনে করছেন মাত্র ১৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী, যেখানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ। দেশ পরিচালনায় দুজনের কেউই উপযুক্ত নন বলে রায় দিয়েছে ২৭ শতাংশ। কনজারভেটিভ ভোটারদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ এখনো মনে করেন, ‘বেনেফিট কাটের’ সিদ্ধান্তে সঠিক পথেই এগোচ্ছে সরকার। যেখানে দল-মত নির্বিশেষে ৪৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ‘বেনেফিট কাট’সহ দেশের সার্বিক ব্যয় সংকোচনে এখনই লাগাম টেনে ধরা দরকার সরকারের। ব্রিটেনে দুই হাজার ২১৯ জন স্কাইকাস্টমারের মতামতের ভিত্তিতে জরিপটি পরিচালনা করে স্কাই। যাদের অধিকাংশই মনে করেন, খুব সহসাই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে ব্রিটেনের অর্থনীতি।