ওসমানীনগরে দুই সন্তানকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করে পিতা ছাতির আলী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১:৪২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ ওসমানীনগরের চিন্তামইন গ্রামে দুই সন্তানকে খুন করা পিতা একজন মানসিক রোগী বলে জানায় নিহত শিশুদের মা নুরমিন বেগম ও তাদের পরিবারের লোকজন পুলিশ এবং গ্রামবাসী। তারা জানান মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে দুই ছেলেকে খুন করেন পিতা ছাতির আলী।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, ছাতির আলী দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে এ জন্য অনেক বার চিকিৎসা করিয়েছেন। এ কারণে ছাতির তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বিবাধ করে তাদের মধ্যে দুরত্বের সৃষ্ঠি হয়। স্বামীর অত্যাচারে স্ত্রী নুরমিনা বেগম দুই ছেলে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তার পিত্রালয়ে চলে যান। দীর্ঘ দিন নুরমিন বেগম পিত্রালয়ে বসবাস করেন। সম্প্রতি গ্রামের সালিশ মধ্যস্থতায় সন্তানদের নিয়ে প্রায় মাস খানেক পূর্বে স্বামী ছাতির মিয়ার বাড়িতে আসেন। এর পরই গত সোমবার ছাতির দুই ছেলে সাথে নিয়ে মাছ ধরতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী দরগাবন্দে গিয়ে ছেলে রুজেল ও মামুনকে নিজ হাতে খুন করেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর ধারণা ছাতির মিয়া ঘটনার দিন বিকেলে বড় ছেলে রুজেল কে মাছ দিয়ে বাড়িতে পাঠানোর পর সম্ভবত ছোট ছেলে মামুনকে প্রথমে সুপারি গাছের একটি শলা দিয়ে খুছিয়ে খুছিয়ে হত্যা করে। বড় ছেলে পুনরায় মাছ ধরতে এলে তাকেও অনুরূপ ভাবে হত্যা করা হয়। লাশ উদ্ধার কালে পুলিশ লাশের পাশ থেকে সুপারির শলাটি আলামত হিসেবে জব্ধ করে। নিহত শিশু দুটির সুরহাতহাল করার সময় তাদের গায়ে চোখে ও মাথার একাধিক স্থানে শলা দিয়ে খুছানোর মতো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলে বলে জানিয়েছেন ওসমানীনগর থানার ওসি আব্দুল আউয়াল চৌধুরী।
এ দিকে পিতা ছাতির মিয়ার হাতে নৃশংস ভাবে দুই সহোদর রুজেল ও মামুন খুনের ঘটনায় শোকের মাতম চলছে নিহতদের পরিবারে। এ ঘটনায় চিন্তামনি গ্রাম সহ গোটা উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্তব্ধ হয়ে পরেছে চিন্তামনি গ্রাম। বুকের মানিক দুই ছেলে সন্তানকে হারিয়ে একমাত্র কন্যা সন্তান তানজিনাকে বুকে নিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন নিহত রুজেল ও মামুনের মা নুরমিন বেগম। ছেলেদের শোকে অসুস্থ্য হয়ে শয্যাশায়ী রয়েছেন তিনি। এক সাথে একই পরিবারের দুই সহোদর আবার পিতার হাতে খুন হওয়ায় ঘটনাস্থল উপজেলার দয়ামীর ইউপির চিন্তামনি গ্রাম সহ গোটা উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার রাত থেকে গতকাল সারা দিন ধরে পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ গণমাধ্যমের কর্মিরা নিতদের গ্রামের বাড়ি চিন্তামনিতে ভীড় করেছেন।
এ দিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে নিহতদের রুজেল ও মামুনের লাশ তাদের পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার আছরের নামাজের পর জানাজার নামাজ শেষে নিতহতের চিন্তামনি গ্রামের পারিবারিক কবর তাদের লাশ দাফন করা হয়।
নিতহ রুজেল ও মামুনের চাচাতো ভাই জমির মিয়া বলেন, আমার চাচা মানষিক বিকারগ্রস্থ ছিলেন। তিনি তার ছেলে রুজেল ও মামুনকে সাথে নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে নিজেই তাদেরকে খুন করেন।
ওসমানীনগর থানার ওসি আব্দুল আউয়াল চৌধুরী বলেন, নিহত শিশুদের মা নুরমিন বেগম, ছাতিরের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা, গ্রামবাসী ও ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী প্রাথমিক ভাবে ছাতির মিয়াই তার দুই পুত্রকে খুন করেছে বলে ধারণা। তদন্তে ঘটনার বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।