অবৈধদের ফেরত পাঠাতে অর্থসহ নানা সুবিধা প্রদানের ঘোষনা ব্রিটেনের
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১:৫২ পূর্বাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ ব্রিটেন থেকে স্বেচ্ছায় চলে যেতে অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের নগদ অর্থসহ নানা সুবিধা দিচ্ছে হোম অফিস। এই সুবিধার মধ্যে রয়েছে বিমান টিকিট, নিজ দেশে ফেরত গিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পরিবারের ব্যয় নির্বাহ ও সন্তান থাকলে তাদের পড়াশুনার জন্যও অর্থ দেয়া হচ্ছে। তবে ব্যক্তি বিশেষের অবস্থা অনুয়ায়ী এই সাহায্যের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন।
সাউথ ইস্ট ইংল্যান্ড ইমিগ্রেশন কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট টিমের প্রধান রিচার্ড লেডার্ল একটি ক্যাবল টিভির ‘স্পিরিচুয়াল লাইভ’ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে হোম অফিসের এই উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
ওই অনুষ্ঠানের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন মহল থেকে হোম অফিসের এমন উদ্যোগের সমালোচনা উঠেছে। সমালোচকরা অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের দেশ ছাড়ার বিনিময়ে অর্থ প্রদানের বিষয়টিকে ঘুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলেন, যেসব লোক ব্রিটেনে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বা অবৈধভাবে অবস্থান করে ফৌজদারি অপরাধ করেছে, তাদের শাস্তির বদলে অর্থ প্রদানের বিষয়টি মানা যায় না। তারা বলেন, এই উদ্যোগ ব্রিটেনে অবৈধ প্রবেশ ও ভিসা শেষ হওয়ার পরও ব্রিটেনে অবৈধভাবে অবস্থানের বিষয়টিকে উৎসাহিত করবে বলে সমালোচকরা মনে করেন।
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা রিচার্ড লেডার্ল হোম অফিসের নতুন এই উদ্যোগ সম্পর্কে প্রচার চালাতে স্পিরিচুয়াল লাইভ অনুষ্ঠানে হাজির হন। অনুষ্ঠানে তিনি জানান, অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের এই আর্থিক সেবা নেয়ার জন্য হোম অফিস লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে সার্জারি চালু করেছে। বিশেষ করে নর্থ ও ওয়েস্ট লন্ডনের গুরুদূয়ারা এবং হিন্দু মন্দিরগুলোতে নিয়মিত এই সেবা দেয়া হচ্ছে। যেসব অবৈধ অভিবাসী স্বেচ্ছায় ব্রিটেন ত্যাগ করতে চান তারা এসব সার্জারিতে গিয়ে নিজেদের ইচ্ছার কথা জানাতে পারবেন। রিচার্ড লেডার্ল বলেন, সার্জারিতে আসা কোনো অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হবে না-এটা নিশ্চিত। কেবল বাড়ি যেতে চাইলে তাদের প্রয়োজন মত সেবা প্রদান করা হবে। এর মধ্যে বিমান টিকিট, দেশে ফিরে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য নগদ অর্থ এবং পরিবারের খরচ চালানোর জন্যও অর্থ দেয়া হবে। তবে প্রত্যোক ব্যক্তির প্রয়োজনের উপর এই সাহায্য নির্ভর করবে। নগদ অর্থের পরিমান সর্বোচ্চ দুই হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা। প্রায় বছর খানেক ধরে হোম অফিস এই প্রকল্প চালাচ্ছে। তিনি জানান, সাধারণত কোনো অবৈধ ইমিগ্রেন্টকে গ্রেফতার করে দেশে ফেরত পাঠানো হলে তাদের ১০ বছরের জন্য ব্রিটেনে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু স্বেচ্ছায় যারা হোম অফিসের আর্থিক সুবিধা নিয়ে ব্রিটেন ছাড়বেন তাদের ক্ষেত্রে ওই নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে দুই বছর করা হচ্ছে। ফলে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার দুই বছরের মাথায় চাইলে তাঁরা আবারও ব্রিটেনে আসার আবেদন করতে পারবেন।
সরকারে নতুন এই উদ্যোগ তিন বছর আগে নেয়া হোম অফিসের উদ্যোগের সাথে সাংঘর্ষিক। তিন বছর আগে অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের দেশ ছাড়ার বার্তা সম্বলিত ভ্যান গাড়ি নামায় হোম অফিস। ওইসব ভ্যানের গায়ে অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের উদ্দেশে লেখা ছিল-‘স্বেচ্ছায় দ্রুত ব্রিটেন ছাড় ন, অন্যথায় গ্রেফতারের শিকার হয়ে জোরপূর্বক বিতাড়নের শিকার হবেন’। আর এখন হোম অফিস বলছে, দেশ ছাড়ার জন্য প্রয়োজনী সাহায্য পেতে অবৈধ ইমিগ্রেন্টরা হোম অফিসের কর্তাদের সাথে বৈঠক করতে পারবে কিন্তু তাদের গ্রেফতার করা হবে না।
ব্রিটেনে ঠিক কী পরিমান ইমিগ্রেন্ট অবৈধ উপায়ে বসবাস করছে তার কোনো সুনিদিষ্ট হিসাব সরকারের কাছে নেই। ধারণা করা হয় যে এই সংখ্যা এক লাখেরও বেশি হবে। এর মধ্যে অবৈধ প্রবেশকারী থেকে শুরু করে ওভারস্টেয়ার এবং প্রত্যাখ্যাত অ্যাসাইলাম সিকাররাও রয়েছেন। কিন্তু এসব ইমিগ্রেন্টদের গ্রেফতার করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর মত রশদ সরকারের নেই।
ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়, ১৯৯৯ সাল থেকে হোম অফিস অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের বিতাড়নে টিকিটের অর্থ প্রদান করে আসছে। ২০০৬ সালে সর্বোচ্চ ৬২০০ অবৈধ ইমিগ্রেন্ট এই সাহায্য নিয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সালে এসে এই সাহায্য গ্রহীতার সংখ্যা কমে হয়েছে ১৬৩৫ জন। সর্বশেষ প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী ২০১২-১৩ সালে হোম অফিস এই প্রকল্পে প্রায় ৮০ লাখ পাউন্ড ব্যয় করেছে। হোম অফিস বলছে, নতুন এই কৌশলের ফলে সরকারের বছরে ৫০ লাখ পাউন্ডের সাশ্রয় হচ্ছে।