স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে ব্রিটেন ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরাঃ অনিশ্চিত ৫০ হাজার বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ আগস্ট ২০১৬, ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ গভীর সংকটে বৃটেনে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর এখন টার্গেট ইউরোপের বিভিন্ন দেশ । ব্রিটেনের চেয়ে বিভিন্ন দিক দিয়ে সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় লন্ডনে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা পাড়ি জমাচ্ছেন ফ্রান্স, বেলজিয়াম,পর্তুগাল স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে। ইতিমধ্যেই ব্রিটেন ছেড়েছেন প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি শিক্ষার্থী। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি অর্থ উপার্জনের যে স্বপ্ন নিয়ে এই ব্রিটেনে পদাপর্ণ হয়েছিল, সে স্বপ্ন যেন অঙ্কুরেই ভন্ডুল হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনা তো দূরে থাক, টিকে থাকাই দায় হয়ে দাড়িয়েছে অনেকের । ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ সরকারের কঠোর ইমিগ্রেশন নিয়মের বেড়াজালে ব্রিটেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নভঙ্গের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে । অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত।
ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দার ভেতরে ফ্রান্সে এসাইলামসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বেশি থাকায় লন্ডনে আসা শিক্ষার্থীরা ফ্রান্সের দিকে ঝুকেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ফ্রান্সে দুই তিনটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলা তাদের ফ্রান্সে পারি দেওয়া কঠিন হয়ে পরেছে।সম্প্রতি সরকারী এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদেশী স্টুডেন্টদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দেয়া ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেষ্টের প্রায় ৪৮ হাজার অবৈধ ও সন্দেহজনক সার্টিফিকেটের প্রমাণ পাওয়া যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হোম অফিস দেশের ৫৭টি কলেজ ও ৩টি ইউনিভার্সিটির লাইসেন্স বাতিল ও স্থগিত করে দেয়। একই সাথে হোম অফিস স্থগিত হওয়া ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এমন পরিস্থিতে বৃটেনের সাবেক ইমিগ্রেশন মিনিস্টার থেকে আরো কঠোর নীতিমালা আরোপ করা হয় । স্থগিত হওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হচ্ছেন বাংলাদেশ,ভারত পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা। ইমিগ্রেশন মিনিস্টার বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদনপ্রাপ্ত তালিকা থেকে ইতিমধ্যে ৭৫০টি কলেজের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৪শত’ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সরকার অবগত আছে, যারা ভূয়া সনদ সরবরাহকারী এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ রাখছে। ইমিগ্রেশন বিভাগ জানায়, বিদেশী শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ২০ ঘন্টার বেশী কাজের অনুমতি না থাকলেও বছরে ২০ হাজার পাউন্ড উপার্জন করছে এমন বিদেশী শিক্ষার্থীও চিহ্নিত করতে পেরেছে রেভিনিউ অ্যান্ড কাস্টমস বিভাগ ( এইচএমআরসি)। আগামীতে এসব স্টুডেন্টের জন্য বৃটেনে বসবাস কঠিন হয়ে যাবে বলে তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। বৃটিশ সরকারের এমন সিদ্ধান্তের খবরে হতাশা নেমে এসেছে বৃটেনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মাঝে। তাদের মধ্য অনেকের ভাবনা ছিল অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ সহ বিশ্বের খ্যাত নামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া । কিন্তু সেই স্বপ্ন পেছনে ফেলে এখন তারা হয়তো কোন করছেন কাজ নয়তো বিভিন্ন ষ্টেশনারী দোকানের কর্মচারী। উচ্চতর শিক্ষা তো দূরে থাক এখন চিন্তা লন্ডনের মত খরচে শহরে জীবিকা নির্বাহ করা। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর্থিক ও মানসিকভাবে তেমনি হয়ে পড়ছে অবৈধ অভিবাসি। আর এভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন। অভিবাসী আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে না আসলে এর প্রভাব পড়বে যুক্তরাজ্যের আর্থ-সামাজিক পরিবেশে। ব্রিটেনে পড়তে আসা ওসমানীনগরের মামুন মিয়া জানান, নানা সমস্যায় তার এখন ব্রিটেনে টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পরেছে। এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া এতো সহজ নয় আর টিকে থাকতে হলে ঠিক কি করতে হবে তাও জানা নেই তার। চোখের সামনে ঘোর অন্ধকার দেখছেন তিনি । মেরিটাইম কলেজের প্রিন্সিপাল নরেন্দ্র ক্যান্ডেল বলেন,ইউকেবিএ হঠাৎ করেই বেশ কিছু নিয়মে পরিবর্তন এনেছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পরেছে। ফলে আমরাও পরেছি নানা সংকটে। আমরা সংগঠিত ভাবে হোম অফিসকে বোঝানোর চেষ্টা করছি পাশাপাশি স্টুডেন্ট এবং কমিউনিটিতে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যপারে উদ্যোগ নিচ্ছি। নর্থ ওয়েস্ট লন্ডন কলেজের প্রিন্সিপাল মাইকেল স্কটস বলেন, আমরা এসব নিয়মের সমালোচনা করে আসছি। এগুলো বিদেশি স্টুডেন্টদের উপরে যেমন প্রভাব ফেলছে তেমনি ব্রিটেনের অর্থনীতিতেও সমস্যার সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, সব স্টুডেন্টই টাকা ইনকামের জন্য ইউকে আসে না। গুটিকয় স্টুডেন্ট এই উদ্দেশ্যে আসে। তাদের জন্য সবাই ভোগান্তির শিকার হবে এটা ঠিক নয়।